আহসান হাবিব: যদি এই সময়ের সবচেয়ে বড় বুদ্ধিজীবী কে বলতে বলা হয়, তবে আমি একজনের নামই নেবোÑ সে আর কেউ নয়, করোনা! কেন তিনি বুদ্ধিজীবী? কারণ তিনি এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি মানবপ্রজাতিকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছেন। মানবপ্রজাতি এ পর্যন্ত যতো প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে, তার সবটাকেই পরাজিত করে তিনি বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তার বুদ্ধির ক্ষমতা কতোটুকু এখন পর্যন্ত মানুষ তার হদিস করতে পারেনি। বুদ্ধিজীবীতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা, বিকল্প রাষ্ট্র হয়ে ওঠা এবং একটি শোষণ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বা সমাজ নির্মাণে কাজ করে যাওয়া। করোনা ঠিক এই কাজটিই করছেন, তিনি শুধু রাষ্ট্র নয়, সারা পৃথিবীর ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেছেন এবং তাদের ভাবতে বাধ্য করেছেন, মানবপ্রজাতি প্রাণ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যতো নিষ্ঠুর আচরণ করেছে এবং তাকে ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে, তার জন্য তার শাস্তি প্রাপ্য। করোনা এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েই নন্দলালদের মতো ঘরে বসে থাকেনি। তিনি সংহারে নেমেছেন এবং তার সমস্ত কৌশল প্রয়োগ করে চলেছেন।
তিনি সফল হয়ে উঠেছেন। কারণ রাষ্ট্রগুলো তার সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেও তাকে পরাজিত করতে পারেনি। তার জয়পতাকা এখনো উড়ে চলেছে। এর মধ্যেই তিনি তার কৌশল পরিবর্তন করেছেন। নিজেকে বদলে নিয়েছেন, একজন বুদ্ধিজীবী যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আপডেট করে নেন। মানুষ এরই মধ্যে তাকে পরাজিত করতে বিবিধ প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে, ওষুধ, টিকা ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধে করোনাও নিজেকে বদলে ফেলেছেন এবং আক্রমণ জারি রেখেছেন। তিনি ততোক্ষণে নিজেকে ক্ষান্ত করবেন যতোক্ষণ রাষ্ট্র এবং ক্ষমতা একটি সুষম ও প্রকৃতিবান্ধব পৃথিবী গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেবে। অর্থাৎ একজন বুদ্ধিজীবী যেমন রাষ্ট্র ও ক্ষমতাকে বাধ্য করে তার নিপীড়ন থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, করোনাও ঠিক সেই কাজটিই করে চলেছেন সফলভাবে। তার কাজ পক্ষপাতদুষ্ট নয়, সার্বজনীন। সব রাষ্ট্রই তার প্রশ্নের আওতায়। সত্যি বলতে, এই মুহূর্তে করোনার মত বুদ্ধিজীবী মানবপ্রজাতিতে নেই। লেখক : উপন্যাসিক