সুজন কৈরী: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের চতুর্থ দিন রোববার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এ সময় নানা অজুহাতে বাইরে বের হওয়া কয়েকজনকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। আদালতের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
টানা আড়াই ঘণ্টায় ২০ জনকে করোনার বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের কারণে মোট ৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় দেখা যায়, ভুয়া প্রেসক্রিপশন, মাশরুম কিনা, আবার কেউ আত্মীয়ের বাসায় খাবার দিতে, আবার কেউ বসের বাসায় গৃহস্থালি কাজ করতে বের হয়েছেন বলে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে জাহাঙ্গীর নামের একজন রিকশাযাত্রীকে থামানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, রোগীর জন্য ওষুধ কিনতে মালিবাগ যাচ্ছেন। ম্যাজিস্ট্রেট প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইলে তিনি একটি কাগজ দেখান। সেখানে ওষুধের নাম লেখা থাকলেও নিচে কর্তব্যরত চিকিৎসকের নাম বা সিল-স্বাক্ষর কিছুই ছিলো না। শুধু ‘অর্ডার বাই ডক্টর’ লেখা। যা নার্স লিখে দিয়েছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর।
ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, এটা প্রেসক্রিপশন নয়। ইনভেস্টিগেশন স্লিপ। এটা অবশ্যই ভুয়া। যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া বের হওয়ায় জাহাঙ্গীরকে ৩০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তি রিকশায় করে পুরানা পল্টন থেকে শান্তিনগর মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। কাকরাইল মোড়ে তাকে থামিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইব্রাহিম জানান, তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে যাচ্ছিলেন। পরক্ষণেই আবার বলেন, তিনি মাশরুম কিনতে যাচ্ছেন। দুই রকম কথা বলায় মোবাইল কোর্ট তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন।
এছাড়া সাজেদুল নামের একজনকে থামানো হলে তিনি ফুটবল খেলতে অ্যাঙ্কলেট কিনতে বের হয়েছিলেন। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ৩০০ টাকা জরিমানা করেন।
অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, সরকার যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে তা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী জীবিকা নিশ্চিত করতে। হয়তো লকডাউনের কারণে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী ফল রয়েছে। ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও দেশকে করোনা থেকে সুরক্ষার দিকটা বিবেচনায় আমরা কঠোরভাবে সরকারি বিধিনিষেধ পরিপালনে চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, এবার সরকারি বিধিনিষেধ পরিপালনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। একান্তই জরুরি ও অত্যাবশ্যক কারণ ছাড়া বা লকডাউনের বিধিনিষেধের নির্দেশনার আওতার বাইরে যারা রয়েছেন শুধু তারা বের হতে পারছেন। এর বাইরে আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যাদের কারণ যথোপযুক্ত মনে হচ্ছে না তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এর মধ্যেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কেউ যাচ্ছেন মাশরুম কিনতে, কেউ আবার যাচ্ছেন ফুটবল খেলার অ্যাঙ্কলেট কিনতে, আবার কাউকে কাউকে বলতে শুনলাম ধোলাইপাড়ে ঘুরতে যাচ্ছেন। যা করোনার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পড়ে না। এ জন্য জরিমানা করা হয়েছে। আমরা জরিমানার চেয়ে সচেতনতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। তবে নিয়ম না মানলে কঠোর আইন প্রয়োগে পিছুপা হবো না।