মো. ইউসুফ মিয়া : [২] রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের প্রাণপুর গ্রামের জ্বীন দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন ও ভয় দেখিয়ে সাধু সবুর মন্ডল অরফে সবুজ নামের এক প্রতারক উঠতি বয়সের মেয়েদেরকে ধর্ষণ করে আসছিলো।
[৩] ভণ্ড সাধু বলতেন, আমার কাছে প্রতিরাতে জ্বীন আসে আমি জ্বীনের বাদশা জ্বীনের দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করে দিবো, জ্বীন দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করে দিব। আর কোনোদিন গরীব দরিদ্র অসহায় ভাবে থাকতে হবে না । এসব প্রলোভনের কথা বলে গ্রামের অসহায় সহজ সরল পরিবারকে টার্গেক করে গ্রামের বিভিন্নবাড়ীর অল্প বয়সি মেয়েদের দিয়ে আসন-ধ্যান বসানোর কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে শারিরীক সর্ম্পক করে আসছিল।
[৪] সাধুর বিরুদ্ধে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে এলাকাবাসী।
[৫] এ ঘটনায় (১৫ জুন) মঙ্গলবার ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বোন পাপিয়া ও অপর ছাত্রীর পিতা মো. রবিউল ইসলাম অরফে হুমায়ুন বাদী হয়ে রাজবাড়ীর আদালতে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে।
[৬] রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্যাইবুনাল আদালতে নারী শিশু ও নির্যাতন দমন আইনে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেছেন। পাংশা মডেল থানাকে মামলা ২টি এফআই আর করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত ।
[৭] ওই তরুণীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের জ্বীন ও পরীর ভয় দেখিয়ে ২ জনের সাথেই ৪ বার করে শারীরিক সর্ম্পক করেছে, প্রথমে জোর করে পরে আমাদের সকল আত্বীয়কে জ্বীন দিয়ে মেরে ফেলবে এ কথা কাউকে বললে সে এভাবে ভয় দেখিয়ে আমাদের সাথে শারিরিক সর্ম্পক করে।
[৮] ৯ম শ্রেণীতে ছাত্রী ওই তরুণী বলেন, প্রথমে আমার বাবাকে প্রলোভন দেখিয়ে বড় লোক বানানোর কথা বলে রাতে আমাকে এক গ্লাস পানি নিয়ে পাশেই একটি তাল গাছের তলায় যেতে বলে, আমি সেখানে পানি নিয়ে যাই। তখন সেই সাধু নানা ধরনের কথা বলে আমাকে জোর করে হাত বেঁধে ফেলে জোর করে ধর্ষণ করে।
[৯] ওই তরুণী আরো বলেন, এভাবে ৪১দিন জ্বীনের খায়েশ মিটিয়ে দিলে আমাদের ভাগ্যর পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে সে আশ্বাস দেয়।
[১০] অপর তরুণী জানান, আমি বড় বোনের বাড়ীতে অবস্থান করছি বেশ কিছুদিন ধরে। রাতে আমি ও আমার ভাইয়ের মেয়ে এক সাথেই ঘুমাই এর মধ্যে ওই লম্পট সাধু সবুরের নজর পরে আমার দিকে। সে নানাভাবে আসন বসানোর কথা বলে, তার বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলে, আমি যেতে না চাইলে আমার বোন ও বোনের জামাইয়ের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেয়।
[১১] পরে আমি আসনে গেলে প্রথমে আমাকে ২ রাকাত নামাজ পড়ার কথা বলে। আমি নামাজ শেষ করতেই ঘরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, সেই সাথে সাধু সবুর একটি কালো রংয়ের জুব্বা পড়ে আমার সামনে আসে এবং আমার গায়ে হাত দেয় এ সময় আমি নিষেধ করলে সে জানায় আমি জ্বীন, সবুরের রুপে তোমার কাছে আসছি, আমার খায়েশ মিটিয়ে দাও তোমার মনের এবং জীবনের সকল আশা পূরণ করা হবে। তোর জীবনের যেটা আশা করবি সেটাই দ্রুত পাইবি।
[১২] ওই তরুণী একই সাথে বলেন, সবুর জোর করে জায়নামাজের পাটির উপর ফেলে আমাকে ধর্ষণ করে, আমি চিৎকার করে কান্না করছি কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি, সবুরের বাড়ীর লোকজনও জানত ওই ঘরে কি হচ্ছে কিন্তু কেউ আসেনি আমাকে বাঁচাতে।
[১৩] এরপর থেকে নানা ভাবে জ্বীনের ভয় দেখিয়ে আমার পরিবারের সকলকে মেরে ফেলবে বলে আমার সাথে ৪ বার শারিরীক সর্ম্পক করেছে। বিষয়টি আমি বুঝতে পেরে আমার বোনের সাথে আলাপ আলোচনা করার পর সবুর বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে নানা ভাবে হুমকি ও বাড়ীতে মূখোশধারী সন্ত্রাসীদেরকে পাঠিয়ে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে যেন এ বিষয় নিয়ে আমরা এলাকার মানুষের কাছে মুখ না খুলি।
[১৪] এদিকে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ এ বিষয়টি জানার পর থেকেই ভণ্ড সবুরের বিচার কামনা করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভণ্ড সবুর চালাক ও প্রতারক লোক, বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করাই তার পেশা। এর আগে র্যাবের পোশাক পড়ে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পরে জেল খেটেছে সাধু সবুর। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের প্রতারণাসহ চাকুরী দেওয়ার কথা বলেও টাকা নিয়েছে ।
[১৫] এলাকাবাসী আরও জানায়, পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের প্রাণপুর গ্রামের সরল ও অসহায় মেয়েদেরকে নিয়ের জ্বীনের ভয়ে তাদেরকে ধর্ষণ করতো আমাদের এলাকার আর কোনো মেয়ের এরকম ক্ষতি করতে না পারে এ বিষয়ে এলাকাবাসি এ ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
[১৬] ক্ষতিগ্রস্ত ২ তরুণী বিচার চেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন আমাদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে যেন আর কোন বোনের সাথে এরুপ না হয়, আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
[১৭] এবিষয়ে ভণ্ড ও প্রতারক সবুরের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ ও বাড়ীতে গিয়ে না পাওয়ায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এলাকার জনগণ জানান, এই ধর্ষণের কথা জানা জানি হলে বর্তমানে সবুর পলাতক রয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ