সুব্রত বিশ্বাস : উন্নত দেশগুলো মানসম্মত ও সুষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য, শিল্পকলা, কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে সাফল্য অর্জন করে চলছে। বাংলাদেশও এ লক্ষ্যে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ‘বস্তুত শিক্ষা’ একটি পরিবর্তনশীল প্রপঞ্চ। আমাদের শিক্ষা কিংবা উন্নয়ন কাঠামো তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক নয়। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ তরুণ জনগোষ্ঠী। ‘যুগোপযোগী বাজেট না হলে জাতীয় সংকট তৈরি হবে’।
জাতীয় বাজেটে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও বিনিয়োগের কোনো পরিকল্পনা থাকছে না। আবার সমন্বয়, বাস্তবায়ন, উদ্ভাবন ও তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রমের ঘাটতিও প্রকট। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে অগ্রসর হওয়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেও পিছিয়ে পড়ছে আমাদের তরুণরা। পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি হচ্ছে না। ফলে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের তরুণদের সামনে। গর্বাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য উন্নয়নসহ সব বিষয়ে শিশুদের মানসিক বিকাশে সুস্পষ্ট বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। শিশু ও যুব শক্তির উন্নয়ন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অনেক শিশু পুষ্টিহীনতায় আছে।
পুষ্টিহীনতায় থাকলে আমরা কর্মময় যুবশক্তি পাবো না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দরকার তা করা হচ্ছে না। পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে, বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত বিকাশ অনেক খানি হয়েছে। তবে গুণগত তেমন উন্নয়ন ঘটেনি।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে সামগ্রিক শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ০.৯২ শতাংশ এবং উচ্চ শিক্ষা উপ-খাতে বরাদ্দ মাত্র ০.১২ শতাংশ যা সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এগুলো হচ্ছে- বৈষম্যহীন সমন্বিত শিক্ষা, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাক্রম, মানসম্মত ও পেশার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ শিক্ষক সমাজ, প্রয়োজনীয় সুযোগ দিয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতায় এনে ধরে রাখা, সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন, দুর্নীতি নির্মূল ও অপচয়রোধ এবং শিক্ষায় অধিক বিনিয়োগ। শিক্ষক, প্রশিক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান, নেতৃত্ব, শিক্ষাক্রম, শিক্ষণ সামগ্রী, মূল্যযাচাই, শিক্ষা নীতি ও পরিকল্পনা, বহি:স্থ প্রশাসন, অর্থায়ন ইত্যাদি। এসব পূর্বশর্ত পূরণের ওপর নির্ভর করে গুণগত শিক্ষার মাত্রা।
উল্লেখ্য যে, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট জিডিপি’র তুলনায় যথাক্রমে ৪.৫ শতাংশ ও ৩.৫ শতাংশ। উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান জাতীয় বরাদ্দ ০.৯২ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে ২০২২ সালের মধ্যে ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ-এ উন্নীত করা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলংকায় ১০ ডলার, ভারতে ১৪ ডলার, মালয়েশিয়াতে ১৫০ ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার। দেশে শিক্ষাখাতে প্রকৃত অর্থায়ন পর্যাপ্ত নয় এবং প্রকৃত বরাদ্দ মোট জিডিপি’র ২.৫ শতাংশ।
শিক্ষার কাঙ্খিত মান নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, বিষয়ে বৈচিত্র আনয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নবতর জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন এবং উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বিশ্বমানের গবেষণা কার্যক্রম নিশ্চিতকরণে শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনোই বিকল্প নেই। নৈতিকতা বিষয়ক সংকট-এটি এখন সমগ্র বিশ্বেই এক বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। লেখক : ব্যবসায়ী।
আপনার মতামত লিখুন :