আব্দুল্লাহ মামুন : [২] বুয়েটের পানিসম্পদ ও বন্যা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার প্রধান কারণটি মানবসৃষ্ট। গত ৫০ বছর বা ৩০ বছর আগে আমাদের এই অবস্থা ছিলো না তবে ১৯৮৮ ও ৯০ সালের বন্যায় প্রথম ঢাকার একটি অংশ তলিয়ে যায়, তখন নৌকায় চলাচল করতে হয়েছে। সে সময় পশ্চিমদিকে একটি বাধ নির্মাণ করা হয় এবং পূর্বদিক এখনও প্রায় অবমুক্ত।
[৩] পশ্চিম দিকে বেরিবাধঁসহ আন্যান্য রোড নির্মাণ করা হয় এতে পানি সরাসরি নদীতে নামতে পারছে না। একদিকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাধ নির্মাণ করা হয় অন্যদিকে ভেতরে বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
[৪] ১৯৯০ ও ২০০৭ সালের বন্যায় পানি কল্যাণপুর, গোড়ান চাটবাড়িসহ অন্যান্য এলাকায় জমে থাকতো সেগুলো পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন হাউজিংয়ের কবলে পড়ে জলাশয়ের জন্য যে জায়গাগুলো রাখা হয়েছিলো সেগুলোও আর নেই। যার ফলে জলাশয়ের সংকট সৃষ্টি হয় এবং ঢাকায় জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় জলাশয়গুলো কনর্ভাট করা হয়।
[৫] দ্বিতীয়ত ঢাকায় প্রায় ৫২টি খালের অস্থিত্ব ছিলো এবং ওয়াসার প্রতিবেদনে ২৫টা ভালো খাল এবং ৪৮টি খালের অবস্থান দেখানো হয়। রাজধানীতে জমির দাম অনেক বেশি হওয়াতে ক্রমাগত দুর্বৃত্তায়ন হয়ে খাল গুলো দখল হয়েছে এবং সরকারি সংস্থাগুলো নিস্ক্রিয় ভ‚মিকা পালন করছে।
[৬] একদিকে যেমন লোকবলের ঘাটতি আছে, অন্যদিকে সময়মতো কাজ না করা ও এর সঙ্গে দুর্নীতি জড়িত ছিলো। যারফলে শুরুর থেকে ভবনগুলোর বিভিন্ন রকম ইন্টারভেনশন ন্যাচারাল বডিতে দেখা যায়। আরেকটি ভুল হয়েছে সেটি হলো খালগুলো ডিমার্কেশন করা হয়নি যা এখন শুরু হয়েছে। এরফলে ঢাকায় নামে মাত্র ৫২টি খাল আছে বাস্তবে ১৫-২০টিও পাওয়া যাবে না।
[৭] আমাদের আরেকটি স্বভাব যেখানে সেখানে ময়লা ফেলানো এর একটি বড় অংশ বাসা বাড়ি থেকে ৩০-৪০ শতাংশ সংগ্রহ করা যায় বাকি ময়লাগুলো কোথায় যাচ্ছে? বাকি ময়লাগুলো সুয়ারেজ সিস্টেমে, খাল-বিল, নদী-নালার যে পানি পরিবহন ক্ষমতা আছে সেটি রিডাকশন হচ্ছে ফলে তা নদী-নালা, খাল-বিলের তলদেশ ভরে যাচ্ছে। [৮] এছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে কংক্রিটে জনঞ্জাল তৈরি করছি অর্থাৎ আমাদের চারপাশে যে ফাকা জায়গা, জলাশয় ছিলো সেগুলো নেই এবং বাসা-বাড়ির চারিদিকে ৪২ শতাংশ ভ‚মি খোলা রাখতে হয়, সেটিতেও পার্কিং লট ইত্যাদি করে সেই ফাকা জায়গাটুকুও কংক্রিটে ভরে ফেলছি।
[৯] বৃষ্টির পানি সাধারণ ভাবেই ইম্পিলিটেশনের মাধ্যমে মাটির নিচে চলে যায় সেটিও বন্ধ হয়েছে যার ফলে সমস্ত পানি ড্রেনেজ সিস্টেমে চলে আসছে। এতে রান অব ওয়াটারের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যে পানি মাটির নিচে যাওয়ার কথা সেটিও বন্ধ হচ্ছে। [১০] এছাড়াও উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ভারি বৃষ্টি হঠাৎ অনেক বেশি পরিমাণে হতে পারে। যেমন গত বছর রংপুর প্রায় ১২ ঘন্টা পানির নিচে ছিলো বৃষ্টির পানি বের হতে পারেনি বলে। একই দিনে ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি অর্থাৎ ক্লাউড আউটবøাস্ট হয়েছে এরকম বিগ আউট বøাস্টকে অনেক সময় আনপ্রিসিডেন্টটেড গিভেন্স বলা হয়।
[১১] জলাবদ্ধতার আরেকটি অন্যতম কারণ বর্ষা মৌসুমের আগে রাস্ত-ঘাটসহ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য রাস্তা, ড্রেন খনন করা এতে একদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
[১২] জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধার, সিটি কর্পরেশনগুলো ড্রেন, বাধ, পাম্পের পুরো দায়িত্ব নেয়নি যা নেওয়া দরকার। এই দায়িত্বগুলো কয়েকটা সংস্থার হাতে থাকার কারণে আগাম পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। সম্পাদনা: মেহেদী হাসান