মাসুদ আলম: [২] সোমবার ভোর ৩ টা ৫৭ মিনিটে মহাখালী সাততলা বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন ভয়াবহ রূপ নিলে আরও চারটি ইউনিট যোগ দেয়। পরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সামলাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করে সকাল ৬ টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ারের উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদকে প্রধান করে ৫ সদস্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
[৩] প্রত্যক্ষদর্শী বস্তিবাসী জানায়, বস্তির সব ঘরই কাঠ, বাঁশ ও টিনের তৈরি। বস্তিতে অবৈধ গ্যাস লাইন ও বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে। বস্তির পশ্চিম-দক্ষিণ কোন থেকে গ্যাসের লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত। প্রথমে বালি চাপা দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে বাসিন্দারা। এতে আগুন না নিভে বরং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বস্তির উত্তর-পূর্ব দিকে। অধিকাংশ মানুষই সন্তান কোলে এক কাপড়ে ঘর থেকে ছুটে বেড়িয়ে জীবন রক্ষা পান। আগুনে পুড়ে যায় দুই শতাধিক ঘর ও দোকানপাট। আগুনে সব পুড়ে ছাই গেছে। চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। কিছুই করার ছিলো না। প্রতিবছরই বস্তিতে আগুন লাগে। বস্তিগুলো স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন। বস্তি ঘিরে মাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়।
[৪] ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অবৈধ গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। বস্তিতে টিনের ঘর অনেক বেশি সেপারেশন হওয়ায় আমাদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে বলে আমরা ধারণা করছি। প্রচুর পরিমাণে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। দুটির যেকোনো একটির কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ঘনবসতি দাহ্য বস্তু বেশি থাকায় আগুনটা বেশি ছড়িয়েছে।
[৫] বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, রাত সাড়ে ৩টায় বস্তির দক্ষিণ পাশে একটি ঘরে রান্নার কাজ চলছিল। চুলা থেকে হঠাৎ করে গ্যাস লিকেজ হয়ে আগুন ছড়ি পড়ে সারা ঘরে। আগুন লাগার পর ঘরের মানুষজন আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করলে কোনো মতে জীবনটা নিয়ে বের হন তিনি।
[৬] উল্লেখ্য ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট পাঁচ বার পুড়েছে সাততলা বস্তি। ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে এবং ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর এ বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই গ্যাস অথবা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।