নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজীতে প্রায় ৩০ হাজার একর আয়তনে গড়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। এ শিল্পনগরে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল ২৫০ শিল্প প্লটের এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হবে আগামী জুনে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের চাহিদার পরিপ্র্রেক্ষিতে প্লট সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে এটি বাস্তবায়নের সময়সীমাও বেড়ে গেছে।
প্লট বাড়ানোসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হতে আরো দুই বছর সময় বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়ছে ৫৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই প্রথম পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের এ সংশোধন প্রস্তাবের ওপর পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খানের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় বেপজা কর্তৃপক্ষ জানায়, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের শিল্প খাতের বিকাশে সহযোগিতা করে আসছে বেপজা।
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে বিদেশী বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ১ হাজার ১০০ একর ভূমি উন্নয়ন, ৩৬০ একর ভূমিতে ২৫০টি শিল্প প্লট তৈরি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের সংস্থান রেখে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ৭৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প প্লটের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৩৯টি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য ভৌত নির্মাণকাজের পরিমাণ ও প্রাক্কলন হ্রাস-বৃদ্ধি, কিছু নতুন অঙ্গের অন্তর্ভুক্তিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর পাশাপাশি মোট ব্যয় ১ হাজার ৩২১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে মূল অনুমোদিত ব্যয় থেকে ৫৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান কামরুন নাহার বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের দুই বছর পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও এর আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ১৯৫ কোটি টাকা বা প্রায় ২৫ শতাংশ ও ভৌত অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।এমনকি কিছু কাজের কোনো অগ্রগতিই নেই, যা অপ্রত্যাশিত। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান সভায় জানান, বর্ষা মৌসুমে ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ড্রেজিং বন্ধ থাকায় মাটি ভরাট বিলম্বিত হয়েছে। তবে বর্তমানে অধিকাংশ পূর্ত কাজ চলমান রয়েছে। কামরুন নাহার আরো বলেন, মূল প্রকল্পের চেয়ে সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের আকার অনেক বেশি।
সভার সভাপতি শরিফা খান বলেন, প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে সাধারণত বাস্তবায়ন পর্যায়ে উদ্ভূত সমস্যার ক্ষেত্রে স্বল্প মাত্রায় অঙ্গ ও ব্যয়ের সমন্বয়, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হয়।কিন্তু এক্ষেত্রে ভৌত কাজ ব্যাপক বৃদ্ধিসহ ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা যথাযথ হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মাস্টার প্ল্যান অনুসারে প্রকল্পটি প্রণয়নের বিষয়ে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা সুনির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রণয়নের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমে ২৫০টি প্লট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলাম। সে অনুযায়ী আমাদের অধিকাংশ প্লট প্রস্তুত। সে হিসেবে বাস্তবায়ন কম নয়। কিন্তু নতুন করে যখন প্লটের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানো হলো, সে তুলনায় বাস্তবায়নটা কম মনে হচ্ছে। বর্তমানে আবার প্লট বাড়ানোসহ অন্যান্য কাজ বেড়েছে, তাই নতুন করে আবার পিইসির সভায় ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে বলা হয়েছে, সেটাও চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ১২ বছর ধরে কোনো ইপিজেড হয়নি। যে আটটি ইপিজেড রয়েছে সেখানে আর বিনিয়োগের জায়গা নেই। এরপর এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লটের সংখ্যা ৫৩৯টিতে উন্নীত করা হলেও আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ প্লটের চাহিদা পেয়েছি। এগুলোর অধিকাংশ বিদেশী বিনিয়োগের প্রস্তাব। প্লট সংখ্যা বাড়িয়েও সবার চাহিদা অনুযায়ী জায়গা দিতে পারব না। সেজন্যই এর বাস্তবায়ন সময় বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়েছে।
এদিকে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে প্রস্তাবিত সংশোধিত প্রকল্পের কার্যক্রম ও আওতা বাড়ানোর বিষয়টি প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রায় প্রতিফলন এবং লক্ষ্যমাত্রার বিবরণ সুনির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।নতুন পরামর্শক এবং ‘বিশেষায়িত বা জটিল স্থাপনা নির্মাণে পরামর্শক সেবা’র সংস্থান বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি বিষয়ে পরামর্শক সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রাক্কলন নির্ধারণ করতে হবে।
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত ফায়ার স্টেশন সংস্থানের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মাস্টার প্ল্যানের আলোকে বেজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মতামত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন ক্রয় পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্টভাবে একক ক্রয়পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে এবং অবশিষ্ট কাজের সমজাতীয়তা ও যৌক্তিকতার নিরিখে লট বা প্যাকেজ সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।একই সঙ্গে প্রকল্প থেকে বৈদেশিক শিক্ষা সফরের সংস্থানটি বাদ দিতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। - বণিক বার্তা