হাসান শান্তনু : মামুনুল হকসহ শীর্ষ হেফাজতি মৌলভিদের বিরুদ্ধে আপনার সরকার, আওয়ামী লীগের অবস্থান যে এবার সত্যিই কঠোর, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে- এ তথ্য জানিয়ে গত ২ এপ্রিল স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। কারণ পেশাগত সূত্র নিশ্চিত করেছিলো- ধর্ম ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, পঁচাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসিতে লটকানোর বেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার সাহসেই বাংলাদেশ সাহসী। তেমনই ধর্মান্ধগোষ্ঠী নির্মূলে আপনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসী নেতৃত্বের বিকল্প দেশে আপাতত নেই। যদিও সরকার ও আওয়ামী লীগের একাংশের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে ধর্মীয়গোষ্ঠীর সঙ্গে আপসের রাজনীতির ব্যাপক সমালোচনা আছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ, বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলার স্পর্ধা দেখায় ঘাতকপুত্র, হেফাজতি মওলানা মামুনুল হক। ধর্মান্ধ মৌলভির এ দুঃসাহসে সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় ক্ষুব্ধ। মোকতাদির একাত্তরের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বিরুদ্ধে এভাবে কথা বলে সব মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামুনুল ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয় বলেই আপনার সরকার বিবেচনা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘অসম্মানিত’ করায় হেফাজতিদের বিরুদ্ধে দল, সরকারের কঠোর অবস্থানের জন্য সরকারকে অভিনন্দন। কুখ্যাত রাজাকারের বংশধর মামুনুল হকের উগ্রগোষ্ঠী আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
তার বাবাও ওই জেলায় অনেক বছর অবস্থান করে মৌলবাদ ছড়িয়েছে। রাষ্ট্রপিতার ঘাতক শাহরিয়ার রশিদ, তাহের উদ্দিন ঠাকুরের বাড়ি ওই জেলায়। তাদের বংশধররাও আছে। আরেক মৌলভি নেতা ফজলুল হক আমিনির অনুসারীরা জেলার সরাইল উপজেলাসহ অনেক এলাকায় প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ভয়াবহ ত্রাস। স্থানীয় কতিপয় ওহাবি মৌলভি, তাদের অনুসারীও বর্বর আতঙ্ক। প্রধানমন্ত্রী, শহিদের পবিত্র রক্তস্নাত এ দেশের অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকতাদির চৌধুরী নিরন্তর যে লড়াই, সংগ্রাম করে চলেছেন, আপনি এর মূল্যায়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, সম্ভবত ২০০৪ সালের পনের আগস্টের সংখ্যায়, লেখা লাগবে দৈনিক সংবাদের। বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে, তারই স্নেহধন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ কোনো নেতার স্মৃতিচারণ, মূল্যায়ন। অন্তত ছয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ। তারা লিখবেন না বলে জানিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখলে তখন ক্ষমতায় থাকা চারদলের জোট সরকার আওয়ামী লীগের সেসব নেতার ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো ক্ষতি করে কিনা- এ আশঙ্কা থেকে তারা সেদিন লেখেননি বলে প্রচলিত আছে। ওই পরিস্থিতিতে ওইবার সংবাদে লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্নেহধন্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোকতাদির চৌধুরী।
চারদলের জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা ধারাবাহিকভাবে দৈনিক জনকণ্ঠে ‘আত্মজীবনী’ লিখবেন বলে এক লেখায় ঘোষণা দেন। জনকণ্ঠ ‘আওয়ামী ঘেঁষা’, এ পত্রিকায় লিখলে সরকারের কাছে ‘অপ্রিয়’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি শেষ পর্যন্ত তা লেখেননি। এ বিষয়ে প্রখ্যাত কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী ওই সময় জনকণ্ঠে কলামও লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে মোকতাদির সবকালেই পরীক্ষিত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় জুলুম, নির্যাতন, অর্ধশতের বেশি মামলাও তাকে সামান্য টলাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা যখন আপোসকামের মখমলে আরাম আয়েশ করছিলেন, মোকতাদির তখন হত্যাকাণ্ডে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন, ১৯৭৬ সালে। তিনি জাতীয় নেতা, তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভাবনীয় উন্নয়ন করে, দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তিনি বাতিঘর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস একটি নদীর নাম, মোকতাদিরও একটি নদীর নাম, সেটা জনতার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়। শহিদের পবিত্র রক্তস্নাত এ দেশে স্বচ্ছ রাজনীতিক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সমাজসেবক, বিদ্যোৎসাহী ও মুক্তবুদ্ধির চিন্তক মোকতাদিরেরই জয় হবে, মৌলবাদীগোষ্ঠীর নয়। প্রধানমন্ত্রী, হেফাজতি মৌলভিদের সাম্প্রতিক তাণ্ডব চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় প্রশাসনের ‘নিরব’ থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপনি। এ দেশের অসাস্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী মানুষেরা শিগগিরই এর পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসব উগ্র ও রাষ্ট্রবিরোধিগোষ্ঠী নির্মূলে আপনি আরেকটু নজর দিন। ফেসবুক থেকে