শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২১, ০৫:০০ সকাল
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২১, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অজয় দাশগুপ্ত: ৫০ বছরের বাংলাদেশ : ‘শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির’

অজয় দাশগুপ্ত: [১] ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে স্বদেশ। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ।  আমার বালক বেলায় পরাধীনতার গ্লানি মোছানো মায়ের মুখ। আমি একাত্তর দেখেছি। আমি নিজে পরিবারসহ শরণার্থী হয়েছিলাম। আমি দেখেছি বাঙালি মা-বাবা, ভাই-বোন কেমন করে থাকতেন কলাকাতর অদূরে সল্টলেকের পানির পাইপের ভেতর। মাথার ওপে ছাদহীন ঘরে থেকেছি আমরাও। তখন আমরা শরণার্থী হলেও আমাদের মাথার ওপর ছিলেন বঙ্গবন্ধু। নেতার দায়িত্বে ছিলেন মরহুম সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দীন আহমদ, তাঁদের সঙ্গীরা। সহজ ছিলো না এই  যুদ্ধ।  আজ মুখে মুখে আমরা যাই বলি না কেন, সে যুদ্ধ ছিলো ভয়ংকর। একদিকে আমেরিকা চীন আর তাদের বন্ধু পাকিস্তান। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধার দল, ভারত আর রাশিয়া। সে লড়াইয়ে আমরা না জিতলে ইতিহাস হতো  ভিন্ন। হয়তো দুনিয়া থেকেই চলে যেতো বাঙালি নামের এক জাতি। অথবা বাঁচতে হতো আত্মসম্মান মর্যাদাহীন এক দাস জাতি হয়ে। স্যালুট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগী নেতাদের। স্যালুট জানাই সে সব ছিন্নবস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের যারা দু বেলা না খেয়েও যুদ্ধ করেছিলেন। যাঁদের রক্তে ত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক।

[২]  বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ষড়যন্ত্র থামেনি। কতো ধরনের ষড়যন্ত্র। পাকিস্তান তখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছে তাদের ভাষায় , গাদ্দার ভিখারী কালো বাঙালিরা কোনোদিনও দাঁড়াতে পারবে না। পারবে না মাথা তুলতে। উগ্র ভুট্টো তখনো সমানে চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। দেশের ভেতর সক্রিয় মাওবাদী নামে চৈনিক রাজনীতির সমর্থকেরা। তাদের পেছনে জোট বেধেছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। কোথা থেকে অস্ত্র পেতো, কোথায় টাকা সে সব ষড়যন্ত্র ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলেও তখন আমরা বুঝতাম না। এরপর শুরু হয়েছিল জাসদের রাজনীতি। সে আরেক অধ্যায়। জাসদ নিয়ে কিছু বলাও মুশকিল। জাসদ ও তার আদর্শ মরে ভূত হলেও তাদের সমর্থক ফলোয়াররা আছেন। নকশাল আন্দোলন দেখা তরুণ আমি। আমার আত্মীয়দের অনেকে সে আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরে ফিরৈচীলেন সাধারণ জগতে। আমি একসময় ভারতে গজিয়ে ওঠা আনন্দমঠের আনন্দমার্গীদেরও দেখেছি। সেসব ব্যর্থ আন্দোলনের নায়ক খলনায়ক কিংবা সমর্থক পথ হারানো কর্মীরা সব আগুন নিভে যাবার পর আর এ নেবে উচ্চবাচ্য করতেন না । কিন্তু আমাদের জাসদ থামতে নারাজ। এখন তাদের বেশিরভাগ আওয়ামী জোটে ভিড়লেও উল্টোদিকে আছে অনেকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাসদের ভুল ভ্রান্তি মনে না রাখলে ইতিহাস থেকে যাবে বিতর্কিত। তাদের কথা শুনলে এদেশ এগোতে পারতো না। আমরা থাকতাম আফ্রিকার কোনো কোনো  দেশের মতো জঙ্গলময় সমাজে।

[৩] বাংলাদেশের ইতিহাসে সামরিক শাসন এক অনিবার্য ব্যধি হয়ে উঠেছিলো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান ,তারপর একের পর এক ক্যু । তখনকার টাইমস আমাদের দেশের নাম দিয়েছিল ‘দ্যা ক্যু ক্যু ল্যান্ড’। দেশের কাঁধে সিন্দাবাদের ভূতের মতো  চেপে বসা এরশাদ দেশে দুর্নীতি আর বিচারহীনতা প্রাতিষ্ঠানিক করে দিয়েছিলেন। সে জায়গা থেকে বেরুতে সংগ্রাম আর রক্তপাত দেখেছই আমরা। কিন্তু এখানে একটা কথা বলতেই হয় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ত্যাগ আর জীবনদান ইতিহাস এখনো সেভাবে ধারণ করে না। যখন যে সরকার তাদের  ইচ্ছেমতো বদলে দেয় ইতিহাস। বাংলাদেশে  একাধিকবার দেশশাসনে থাকা বিএনপি ষড়যন্ত্র আর পাকি ধারার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে গিয়ে না পারলো দেশের উন্নতি করতে না পারলো নিজেদের ঘর ঠিক রাখতে। চরম সৌভাগ্য জাতির ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে তারা অপসারিত হওয়ার পর দেশ শাসনে এসেছিল আওয়ামী লীগ।

[৪] ঠিক তখন থেকেই পাল্টে যেতে থাকলো দেশ। বলা বাহুল্য ততোদিনে বিশ্ব রাজনীতি অর্থনীতিতে লেগেছে নতুন হাওয়া। বিশ্বায়নের হাওয়ায় সব দেশ সব জাতি বসবাস করতে শুরু করেছে গ্লোবাল ভিলেজে। হঠাৎ খুলে যাওয়া  পৃথিবীর জানালায়  মূক রাকা এই অনুন্নত গরীব নামেরদেশটির প্রয়োজন ছিলো এক সঠিক নেতার। দরকার ছিলো বলিষ্ঠ কোমল আর দেশ দরদী ভূমি সন্তানের। সে মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশ শাসনে এলেন যেন প্রকৃতির এক উপহার। তিরতির ঢেউয়ে বয়ে যাওয়া তরতর করে চলা নৌকা বাংলাদেশকে নিয়ে চললো সামনের দিকে।

[৫] এটাই আজকের বাংলাদেশ। আজ সব অপসংস্কৃতি দুর্নীতি সামাজিক অন্যায়ের পরও মাথা তুলে আছে স্বদেশ। তার শির নেহারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রীর। এতো রক্ত ত্যাগ  অপমান আর দুঃশাসনের জবাব দিয়েছে মাটি। ইতিহাস হয়েছে শুদ্ধ। জাতি হয়েছে পরিশুদ্ধ। আজকের বাংলাদেশ আজকের নতুন প্রজন্ম জানেই না কাকে বলে পরাধীনতা। এই দেশ, এই পতাকা, এই অর্জন হোক সকলের। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশ হোক সবার। জয়তু বাংলাদেশ। লেখক : কলাস্টি, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়