ডেস্ক রিপোর্ট: শীতকে বিদায় জানিয়ে আসছে গরমের দিন। গরম মানেই মানুষের মধ্যে অস্বস্তি শুরু। প্রচণ্ড গরমে মানুষ একটু শান্তি পেতে কত কিনা করেন। ফ্যান, এসি, কুলার ইত্যাদির ব্যবহারও বাড়ে এই গরমকালে। যারা বাইরে বের হন তাদের জন্য গরমকাল আরো বেশি কষ্ট বয়ে আনে। একটু শান্তির আশায় মানুষ কত কিনা করেন।
গরমে আরাম পেতে প্রত্যেকেই সহজ উপায় হিসেবে শরবত বেছে নেন। ঘরের সঙ্গে সঙ্গে বাইরেও বাড়ে শরবতের চাহিদা। এ সময় শরীর ও মনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে এক গ্লাস ঠাণ্ডা শরবতের জুড়ি নেই। গরম মানেই যেহেতু বাহারি ফল, তাই নানা রকম ফলের শরবতও খাওয়া যায় এ সময়ে। ফলের মধ্যে বেল, তরমুজ, আনারস, লেবু উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও অন্য যেকোনো ফল দিয়েই আপনি বানিয়ে নিতে পারেন আপনার পছন্দের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শরবত।
নিশ্চয়ই জানেন, প্রতিটি ফলের আছে নিজস্ব গুনাগুণ। যা মিলবে ফলের শরবতেও। শরবত খাওয়ার মৌসুম যদিও এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। তবে আগে থেকেই জেনে নেয়া ভালো যে কোন শরবতে কোন গুণ আছে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কোন শরবতের কী গুণ বিদ্যমান।
আমের শরবত
পাকা আম কুচি এক কাপ, চিনি স্বাদমতো, পানি আধা কাপ, লবণ এক চিমটি একসঙ্গে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন আমের শরবত।
উপকারিতা
>> আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চ পরিমাণে খাদ্য আঁশ আছে। যা কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা, লিউকোমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
>> আমে প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
>> এতে বিদ্যমান উচ্চ বিটা ক্যারোটিন অ্যাজমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
>> তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত আম খাওয়া ক্ষতিকর। তারা আম পরিমিত খাবেন।
>> অন্যদিকে সুস্থ মানুষের জন্য পাকা বা কাঁচা হোক সব আমই উপকারী।
তরমুজের শরবত
তরমুজ কুচি দুই কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ, বিটা লবণ আধা চা-চামচ, পাতি লেবুর রস ২ চা-চামচ সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে ফ্রিজে রেখে দিন আধাঘণ্টা। ঠাণ্ডা হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু তরমুজের শরবত।
উপকারিতা
>> তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, ভিটামিন সি বিদ্যমান। তাই এই শরবত মুহূর্তেই আপনার সারা দিনের ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
>> এছাড়াও টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা কমাতে ভূমিকা রাখে তরমুজ।
>> অন্যদিকে, পুরুষের বন্ধ্যত্ব ঘুচাতেও তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
লেবু ও আদার শরবত
একটি পাত্রে ২ টুকরো লেবু চিপে এর সঙ্গে চিনির সিরাপ এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে শরবত তৈরি করে নিন। আদা কিউব করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। অথবা থেঁতলে নিন। এরপর আদা ছেঁকে পানি আলাদা করে রাখুন। সিরাপ দেয়া লেবুর পানির সঙ্গে আদার রস ২ টেবিল চামচ মিশান। শেষে পরিমাণমতো বরফ কুচি, পানি, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ ও লেবু চারকোনা করে কেটে গ্লাসে দিয়ে আধাঘণ্টা রেখে দিন। এরপর পান করুন সুস্বাদু লেবু-আদার শরবত।
উপকারিতা
>> ব্রণ আর ত্বকের কালচে দাগ কমাতে লেবু-আদা শরবত উপকারী।
>> রোজায় গ্যাসের সমস্যা দূর করতে আদা-পানির জুড়ি নেই।
>> এছাড়া দীর্ঘ সময় রোজা রাখার ফলে হাতে-পায়ে ব্যথা হয়, আদার পানি শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
>> লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
>> ক্যান্সার, বমি বমি ভাব, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এই পানি।
>> অনেক সময় অতিরিক্ত গরম আর বৃষ্টির জন্য ঠাণ্ডার সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই এই সময় লেবু-আদা শরবত শরীরের জন্য উপকারী।
শসার শরবত
২৫০ গ্রাম শসার খোসা ছাড়িয়ে এবং বীজ ফেলে কুচি করে নিন। এরপর ধনেপাতা কুচি আধা টেবিল চামচ, সামান্য বিট লবণ, সামান্য চিনি, কাঁচামরিচ ১টি এবং সামান্য পানি একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এবার একটি শরবতের গ্লাসে বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন শসার শরবত।
উপকারিতা
>> শসায় লারিসিরেসিনল, পিনোরোসিনল ও সেইকসলারিসিরেসিনল রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন এক গ্লাস শরবত পান করুন, এতে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
>> এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, সিলিকা, ভিটামিন-এ, সি, কে ও ক্লোরোফিল রয়েছে, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শসা মুত্রাশয়ের পাথরও প্রতিরোধ করে।
>> এই শরবত শরীরের সব বিষাক্ত পদার্থ তাড়াতে সাহায্য করে।
>> যাদের হজমে সমস্যা আছে, তারা শসার শরবতে উপকার পেতে পারেন।
>> অন্যদিকে, যেভাবেই শসা খান না কেন, এটি ওজন কমাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
আনারসের শরবত
আনারস কুচি ১ কাপ, বিট লবণ আধা চা চামচ, চিনি ২ চা চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ২ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো আনারসের শরবত। এবার গ্লাসে ঢেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকারিতা
>> এতে প্রচুর ফাইবার ও অনেক কম চর্বি থাকায় তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
>> আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্যও বেশ উপকারী।
>> পুষ্টির একটি বড় উৎস হচ্ছে আনারস। এতে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব উপাদান মানবদেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বেলের শরবত
প্রথমে বেল ফাটিয়ে নিন। এরপর চা চামচ দিয়ে ভেতরের সবটুকু বের করে নিন। এবার সামান্য পানি দিয়ে মাখিয়ে নরম করুন। বেলের আঠা ও বিচি ফেলে ভালোভাবে চালনিতে ছেঁকে নিন। খেয়াল রাখবেন বেলের বিচি যেন থেঁতলে না যায়। বিচি থেঁতলে গেলে কিছুটা তেতো ভাব আসতে পারে। এবার ঠাণ্ডা পানি যোগ করুন। এই পর্যায়ে দুধ পাউডার মেশাতে পারেন। চিনি যার যেমন ইচ্ছা মিশিয়ে নিন।
অন্যদিকে, ডায়াবেটিস রোগী হলে নিজের জন্য নির্ধারিত চিনি ব্যবহার করুন। বরফ কুচি বাদে অন্য সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করুন। এখন গ্লাসে ঢেলে বরফ কুচি মিশিয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন।
উপকারিতা
>> বেলের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অনেক বেশি। তাই সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে বেলের শরবতের জুড়ি নেই।
>> বেলে বিদ্যমান ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, যা বসন্ত গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ করে।
>> এই ফলে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় তা হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস-অ্যাসিডিটির পরিমাণ কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
>> এছাড়া ভিটামিন এ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে পুষ্টি জোগায়।
>> অন্যদিকে, যারা নিয়মিত বেল খান, তাদের কোলন ক্যান্সার, গ্লকোমা, জেরোসিস, জেরোপথ্যালমিয়া (ইত্যাদি চোখের অসুখ) হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ডেইলি বাংলাদেশ