সুজন কৈরী: মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৫ম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প। প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫ হাজার ৮০০টি প্রাক-প্রাথমিক, ২৫০টি বয়স্ক এবং ৪০০টি গীতা শিক্ষাকেন্দ্র চালু রয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা প্রদানই প্রকল্পের মূল কাজ। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর ১ লাখ ৯২ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে জেলাভিত্তিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । এরই ধআলোকে প্রকল্প প্রধান কার্যালয়ের আয়োজনে জাতীয় কর্মশালা-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের অডিটরিয়ামে সকাল থেকে দিনব্যাপী ‘প্রগতিশীল ও সম্প্রীতির উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র চন্দ, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেণ শিকদার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, নেত্রকোনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমান উকিল, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণারয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব বিষ্ণু কুমার সরকার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিসয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৫ম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক রঞ্জিত কুমার দাস। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) সৌরেন্দ্রনাথ সাহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন দক্ষ ও সুনাগরিক তৈরিতে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম অপরিসীম ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দপ্তর/সংস্থাসমূহ ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে উদার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সার্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ এ প্রকল্পটি সারাদেশের ৬ হাজার ৪৫০টি মন্দির অবকাঠামো ব্যবহার করে ৫ হাজার ৮০০টি প্রাক-প্রাথমিক, ৪০০টি গীতা শিক্ষা ও ২৫০টি বয়স্ক স্তরের শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করছে এবং প্রতিবছর ১ লাখ ৯২ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসমৃদ্ধ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করছে, যা হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশাব্যঞ্জক সাড়া জাগিয়েছে।
এর আগে মঙ্গলধ্বনি, শঙ্খধ্বনি ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দেশ মাতৃকার প্রতি এবং স্বাধীনতার সুর্বন জয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের প্রাক্কালে সকল বীর শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।
কর্মশালার অনুষ্ঠানাট দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্ম অধিবেশনে পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও সরমা নামে ৫টি গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দলভিত্তিক আলোচনা করা হয়। আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পদ্মা গ্রুপ আলোচনা করে। নৈতিকতা সম্পন্ন সমাজ বিনির্মান ও শিশুর সুকুমার বৃত্তির পরিস্ফুটনে বা প্রারম্ভিক বিকাশে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের কেন্দ্র শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে গ্রুপ মেঘনা। নৈতিক শিক্ষার প্রসারে গীতাকেন্দ্রের কারিকুলাম উন্নয়ন ও মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যত করণীয় বিষয়ে আলোচনা করে যমুনা গ্রুপ। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে মন্দির কমিটি মনিটরিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ভূমিকা নিয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র এবং সরকারের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে সুরমা গ্রুপ।
গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনা শেষে সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পটির ৫ ম পর্যায়ের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হবে বিধায় দ্রুত ৬ষ্ঠ পর্যায় অনমোদন ও প্রকল্পটি রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি, নৈতিক শিক্ষার প্রসার, ডিশন-২০২১ বাস্তবায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহাদ্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মান ও সরকারের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পটি অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে বলে বক্তারা তুলে ধরেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের জীবনমান উন্নয়ন, উপসনালয়গুলোর মাঝে গতিশীলতা আনয়ন এবং পারস্পরিক সৌহাদ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে এ প্রকল্পের ভূমিকা অপরিসীম। ভবিষ্যতে এ প্রকল্লাটি অব্যাহত রাখার বিষয়ে অতিথিরা একমত পোষণ করেন।