শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪৪ দুপুর
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টিকার অসম বন্টনে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতি হবে ৯.২ ট্রিলিয়ন ডলার

রাশিদ রিয়াজ : ধনী দেশগুলো প্রথমেই জনসংখ্যার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টিকা সংগ্রহ করতে আগাম বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে বসে। এরফলে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কোভিড টিকার নাগাল এখনো পায়নি। এ সংখ্যা ১৩০টি। এরপর ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও কোভিড সংক্রমণের চাপে অস্বস্তিতে পড়েছে এসব দেশের মানুষ। আর বিশ্ব অর্থনীতিতে  এজন্যে ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৯ লাখ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি। ব্লুমবার্গ

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ধনীদেশগুলো আগেভাগে টার্গেট করেই টিকা কব্জার ব্যবস্থা করে ফেলে। এই দৌড়ে গরিব দেশগুলো পিছিয়ে পড়ে। ব্লুমবার্গ ভ্যাকসিন ট্রাকার বলছে গত সপ্তাহে দিনে গড়ে ৪.৫৪ মিলিয়ন টিকা দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশে। কিন্তু তা সুষম বন্টনের ধারে কাছেও নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বিশে^র ১১৯.৮ মিলিয়ন টিকার ৪০ শতাংশ নিজেদের কব্জায় রেখেছে। উন্নয়নশীল ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলো এই টিকা সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে পারেনি। মিসর, মরোক্ক, সিসিলি, গিয়েনার মত দেশগুলো কোনো টিকাই পায়নি। মধ্যএশিয়া ও সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশগুলো এখনো টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে পারেনি।

তার মানে টিকা বৈষম্যে পড়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে আরো পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়েছে এবং এসব দেশ অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা ফিরে পেতে মহামারীতে পিছিয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে এসব দেশ নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলছে। যা এসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। কারণ দক্ষ লোকবল থাকার পরও জনশক্তিকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এসব দেশ পুনরায় অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি করতে পারছে না। সিঙ্গাপুরের মে ব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ চুয়া হাক বিন বলেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি ছাড়া কোনো দেশ নিরাপদ নয়। তারপর ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ার পর এ আশঙ্কা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সমীক্ষা বলছে টিকার বৈষম্যের কবলে পড়েই বিশ্ব অর্থনীতিতে ধকল পড়তে যাচ্ছে ৯.২ ট্রিলিয়ন ডলারের। একই ধরনের গবেষণা করেছে র‌্যান্ড করপোরেশন, সে গবেষণা বলছে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবার টিকা অপ্রাপ্তির কারণে ১.২ ট্রিলিয়ন হ্রাস পাবে। যা বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের ৪ শতাংশের অর্ধেক। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারমেন রেইনহার্ট বলছেন এ পরিস্থিতি উত্তরণে টিকা সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই।

তবে ধনীদেশগুলোর টিকা মজুদের বিষয়টি দেশগুলোর জনগণও সমর্থন করছে না। ইউরোপের দেশগুলো টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থ খরচ করতে রাজি হলেও জটিলতায় পড়ে গেছে। অথচ চীন এক্ষেত্রে টিকাদান কর্মসূচি সফল করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুত এগিয়ে যেতে সমর্থ হয়। গ্যাভাকাল ড্রাগনোমিক্সের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে জরুরিভাবে অর্থ যোগান দিয়েই চীন তা করতে সমর্থ হয়। অবশ্য কিছু উন্নয়শীল দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স টিকা সরবরাহের উদ্যোগের উপর। এ উদ্যোগে ভারত ৯৭.২ মিলিয়ন, পাকিস্তান ১৭.২ ও নাইজেরিয়া ১৬ মিলিয়ন টিকা পেতে যাচ্ছে। কিন্তু এই ধীরগতির টিকা সরবরাহ বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোকে অব্যাহতভাবে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার কর্মসূচি ফিরিয়ে আনতে নিষ্ক্রীয় থাকতে বাধ্য করছে। কারণ সার্বিক কোভিড পরিস্থিতির যাচাইবিহীন একটি পরিবেশ এধরনের দেশকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দক্ষতাকে নিম্নমানে ধরে রাখতে বাধ্য করবে। অর্থনীতিবিদ জিয়াদ দাউদ ও স্কট জনসন এটাই মনে করেন।

র‌্যান্ড গবেষণা বলছে বছরে ধনীদেশগুলো যখন টিকার জন্যে ১১৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তখন নিম্ন আয়ের দেশগুলো সর্বসাকুল্যে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সমর্থ হয়েছে। তারপরও টিকা দিতে না পারা দেশগুলোর জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এক সমীক্ষায় বলছে ধনী দেশগুলো পুরোপুরি টিকা নিশ্চিত করতে পারলেও বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ায় বিশ্বঅর্থনীতিতে ৪৯ শতাংশ ক্ষতি সামাল দিতে হবে। অক্সফোর্ড ইকোনোমিক্সের নির্বাহীদের পরিচালিত এক জরিপ বলছে এবছর পর্যন্ত ব্যবসায়ী কার্যক্রম মহামারীর পর্যায়ের নিচেই থাকবে। জরিপে অংশ নেওয়া নির্বাহীদের ৫ জনের ৪ জনই বলছেন মহামারী তাৎপর্যপূর্ণ ঝুঁকি এবছরও বজায় রাখবে।

তাদের শঙ্কা গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেরা টিকা উৎপাদন করতে না পারায় তাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সংক্রমণের হার বাড়তেই থাকবে। সম্পদের যোগান প্রয়োজনের মূহুর্তে দিতে না পারায় শুধু টিকা নয় নিজস্ব অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। ইন্দোনেশিয়ার কথাই ধরা যাক, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশের ২৭৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা এখনো কোভিডে সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড এড়িয়ে যেতে পারেনি। জানুয়ারির শেষ নাগাদ মাত্র ৫ লাখ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ দিতে পেরেছে মাত্র। ইন্দোনেশিয়া সরকারের জানুয়ারিতে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি। ৬৬টি দেশের মধ্যে দেশটি এখনো কম টিকা প্রাপ্ত মানুষের দেশ। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি একশজন মানুষের মধ্যে শুন্য দশমিক তিন শূন্য ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ ট্রাকার। দি পিটারসন

ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক্স টিকার তথকথিত জাতীয়করণ নিয়ে বলেছে টিকাদান কর্মসূচিতে এ বৈষম্য বজায় থাকা পর্যন্ত কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। যদি কোনো দেশে স্থানীয় পর্যায়ে টিকা দেওয়াও সম্ভব না হয় তাহলে তা বিশ^ অথনৈতিক সমস্যায় অনায়াসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পিটারসনের সিনিয়র ফেলো মনিকা ডি বোলি এ মন্তব্য করে আরো বলেন দুর্ভাগ্যবশত সার্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়