রাশিদুল ইসলাম : [২] চীনের পররাষ্ট্র দফতর বলছে অরুণাচল প্রদেশের সীমানায় যে গ্রাম তৈরি করা হয়েছে তা খুবই ‘সাধারণ’ ব্যাপার, কারণ তা তারা ‘নিজেদের এলাকা’র ভিতরেই গড়ে তোলা হয়েছে।
[৩] চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুন্যিং জানান, ‘এটা স্পষ্টতই চীনের অংশ। চীন-ভারত সীমান্তের পূর্বে জংনন এলাকায় গ্রাম বানানো হয়েছে। এখানে অবৈধ কিছুই দেখিনি, এটা অরুনাচল প্রদেশ নয়।’
[৪] অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ কয়েক দশকের। সম্প্রতি ভারত জানতে পারে গোপনে অরুণাচল প্রদেশের মধ্যেই আস্ত এক গ্রাম বানিয়ে ফেলেছে চীন। গত বছর ১ জানুয়ারি তোলা উপগ্রহ চিত্রে সেই গ্রামটি দেখা যায়। গ্রামটির অবস্থান সীমান্তের সাড়ে চার কিলোমিটার ভেতরে। উজান সুবনসিরি জেলায় সারি ছু নামে এক নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রামটি। সেখানে ১১০টি কুঁড়েঘর রয়েছে।
[৫] ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট উপগ্রহ থেকে ওই অঞ্চলের ছবি তোলা হয়েছিল। তখন সেখানে কোনও বাড়ি দেখা যায়নি। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে তোলা ছবিতে সেখানে ১০০-র বেশি বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তা থেকে পরিষ্কার গত বছরেই গ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছে।
[৬] ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে কয়েক বছর ধরেই সীমান্তে বেআইনি নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছে চীন। তার প্রতিউত্তরে ওয়েবসাইটে বিবৃতিতে চীন বলছেন এটা তাদের ব্যাপার। নিজের আওতাতেই গ্রাম গড়েছে চীন।
[৭] গত অক্টোবরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় ‘কিছুদিন ধরেই ভারত সীমান্তে পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। বাড়তি সেনাও মোতায়েন করছে। সেজন্যই সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে।’ কিন্তু অরুণাচল প্রদেশে নতুন চীনা গ্রামের আশপাশে ভারত কোনও রাস্তা বা অন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলেনি।
[৮] ভারতের সীমান্ত বরাবর ছ’শোর বেশি গ্রাম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। দুশ্চিন্তা আছে ‘চিকেন’স নেক’ নিয়েও।
[৯] গত নভেম্বরে অরুণাচলের বিজেপি সাংসদ তাপির গাও লোকসভায় জানিয়েছিলেন, উজান সুবনসিরি জেলায় চীনারা প্রায়ই ঢুকে পড়ছে। সোমবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, চীনারা অরুণাচলে ঢুকে দুই লেনের রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। তারা সীমান্ত পেরিয়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার ঢুকে পড়েছে।
[১০] অরুণাচলের বুম লা বরাবর তিনটি এনক্লেভ তৈরি করেছে চীন। গত বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিনটি জনপদ তৈরি হয়েছে। উপগ্রহ চিত্র পরপর সাজিয়ে দেখা গেছে, যেখানে আগে একটি জনপদ ছিল, পরে সেখানেই তিনটি জনপদ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি জনপদে ৫০টি করে কাঠামো রয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সবই তৈরি হয়েছে। গ্রামগুলিকে সংযুক্ত করে পাকা পিচের রাস্তাও তৈরি হয়েছে। ওই গ্রামগুলিতে সেনাদের থাকার ব্যবস্থাও করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
[১১] ভারত-ভুটান-চিন এই ত্রিদেশীয় সীমান্ত খুবই স্পর্শকাতর। ভারতের গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, এই ত্রিদেশীয় সীমান্তের বুম লা বরাবর গত এক বছর ধরে তিনটি জনপদ গড়েছে চীন। এই গিরিপথ ভারতের সীমানা থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই। গ্রামগুলি থেকে বিতর্কিত ডোকলাম সীমান্ত মাত্র ৭ কিলোমিটারের মধ্যেই।
[১২] ভারতের গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, চীনের স্ট্র্যাটেজি হল ‘বর্ডার ডিফেন্স ভিলেজ।’ এই সব গ্রামগুলিতে সেনা বাঙ্কার তৈরি হবে। অস্ত্রশস্ত্র মজুত করে রাখা হবে। সীমান্তের হালহকিকতের খবর যাবে পিপলস লিবারেশন আর্মির কাছে। সীমান্তে ভারতের সেনা বিন্যাস কেমন, তার গোপন খবরও চলে যাবে চীনের কাছে।
[১৩] ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলছে, যেখানে যা কিছু হচ্ছে সরকার সব নজরে রাখছে। সীমান্ত সুরক্ষার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তাই করবে সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :