শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারী, ২০২১, ০৮:২৫ সকাল
আপডেট : ২২ জানুয়ারী, ২০২১, ০৮:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ২৩৪২৫ টাকা

কমছে অনুদান, বাড়ছে কঠিন শর্তের ঋণ: ইআরডির হিসাবে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৪০৯ কোটি ৫১ ডলার * জিডিপি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আর্থিক দুর্যোগ, ঋণের ফাঁদে পড়া কিংবা ঋণদাতাদের আস্থা হারানোর শঙ্কা কম -ড. জাহিদ হোসেন * প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ এবং সময়মতো বাস্তবায়ন জরুরি : ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব

অর্থনৈতিক ডেস্ক: বেড়েই চলছে বৈদেশিক ঋণের বোঝা। দেশের প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে এই মুহূর্তে (গত জুন পর্যন্ত) ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ৫২ পয়সা করে বৈদশিক ঋণ রয়েছে।

আজ যে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, ওর মাথায়ও এই ঋণের বোঝা চাপবে। এদিকে দিনে দিনে কমছে সহজ শর্তের বা স্বল্পসুদের ঋণ। ইতোমধ্যে ঋণের সুদ ও শর্ত বাড়িয়েছে উন্নয়নসহযোগীরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ সঠিক এবং প্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয় করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চড়া সুদসহ বিভিন্ন কঠিন শর্তে ঋণ নিয়েও প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সরকার। কিন্তু সেই টাকার যদি কার্যকর ব্যবহার না হয় কিংবা রিটার্ন ঠিকমতো না আসে, তাহলে সাধারণ মানুষের ঘামের টাকায় পরিশোধ করা এই ঋণের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে (গত জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি রয়েছে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে হিসাব করলে প্রত্যেকের মাথায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৮৪৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৩৫১ কোটি ১৮ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, আমাদের ঋণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং সক্ষমতাও রয়েছে। আরও বেশি ঋণ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসহ যেসব খাতে ঋণের টাকা খরচ করলে বেশি রিটার্ন আসবে, সেসব খাতেই ঋণ নেওয়া উচিত।

সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধসহ যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাস্তবায়ন দেরি হলে খরচ বেড়ে যায় এবং যথাসময়ে প্রকল্প থেকে সবিধা পাওয়া যায় না।

ইআরডির সর্বশেষ প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট যে পরিমাণ ঋণের স্থিতি রয়েছে, এর মধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জাপান, সুইজারল্যান্ড, ইউএসএ, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক ও জার্মানি বা কেএফডব্লিউ মিলে মোট ঋণ ৮২৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ইফাদ, ওপেক, এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) মিলে মোট ঋণের স্থিতি ২ হাজার ৯১০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।

এসবের বাইরে চীন, ভারত, স্পেন, যুগোস্লাভিয়া, রাশিয়া এবং বেলারুশ মিলে মোট ঋণের স্থিতি ৫১৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এবং সাপ্লায়ার্স ক্রেডিড (সরবরাহ ঋণ) হিসাবে চীনের কাছ থেকে নেওয়া আছে আরও ১২৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। তবে বেশি সুদে ঋণ নিলেও তা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মনে করছে ইআরডি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যে কোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের নিচেই রয়েছে।

সূত্র জানায়, দিনে দিনে চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে থাকছে অধিক শর্তও। আগে যেসব উন্নয়নসহযোগী সংস্থার কাছ থেকে সুদবিহীন কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ পাওয়া যেত, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি বিবেচনায় সস্তা ঋণ পাওয়া থেকে বাদ পড়ছে দেশ। এছাড়া আগে থেকেই কমে গেছে অনুদান। এক্ষেত্রে ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে প্রাপ্ত বিদেশি সহায়তার ৮৬ শতাংশ অর্থ এসেছিল দ্বিপক্ষীয়ভাবে। এসব সহায়তার সিংহভাগই ছিল অনুদান। ঋণ হিসাবে আসা দ্বিপক্ষীয় সহায়তার সুদের হার ছিল বেশি।

পরিশোধের সময়ও ছিল কম। রাষ্ট্র খাতের কলকারখানা সচল রাখা এবং বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো তৈরির জন্য বাংলাদেশের হাতে তখন বিকল্প ছিল না। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থ সহায়তার মাত্র ১৪ শতাংশ পাওয়া গিয়েছিল বহুপক্ষীয় সংস্থা থেকে। এরপর ১৯৭২-৭৩ সময়ে বৈদেশিক সহায়তার ৩৮ শতাংশ এসেছিল খাদ্য বাবদ, প্রায় ৫২ শতাংশ উপকরণ ও ১০ শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে। সহায়তার ৮৯ শতাংশ ছিল অনুদান আর ১১ শতাংশ ছিল ঋণ।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট বৈদেশিক সহায়তার ৬৪ শতাংশ ঋণ, অনুদান এসেছিল ৩৫ শতাংশের কিছু বেশি। প্রকল্প সহায়তা বাবদ এসেছে ৯৯ শতাংশ অর্থ, খাদ্য সহায়তা ১ শতাংশের মতো। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছাড় হওয়া বিদেশি সহায়তার ৯৯ দশমিক ২০ শতাংশই এসেছে প্রকল্প সহায়তা হিসাবে। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৮৭ শতাংশ। আর অনুদান ছিল মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ। এভাবে অনুদান কমছে আর বাড়ছে ঋণের পরিমাণ।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, এটা ঠিক আগের তুলনায় বেশি সুদ বা শর্তযুক্ত ঋণ বাড়ছে। কিন্তু বর্তমানে যে স্থিতি রয়েছে, এর অধিকাংশই সহজ শর্তের এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

এক্ষেত্রে মাথাপিছু হিসাব করার চেয়ে দেশের অর্থনৈতিক আকারের সঙ্গে তুলনা করা যৌক্তিক হবে। কেননা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএ-এর মতে, একটি দেশের ঋণ ধারণের যে মাপকাঠি, এর অনেক নিচে রয়েছে বাংলাদেশ। সুতরাং ঋণ পরিশোধ করতে না পারার ঝুঁকি কম। এরকম কোনো ঘটনা অতীতেও হয়নি, ভবিষ্যতে হয়তো হবে না।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আর্থিক দুর্যোগ, ঋণের ফাঁদে পড়া কিংবা ঋণদাতাদের আস্থা হারানোর শঙ্কা কম। তবে যেটি মুখ্য বিষয় সেটি হলো-ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার সঠিক হতে হবে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, সেটি যেন সঠিক হয়। বিনিয়োগের রিটার্ন যেন আসে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ইআরডি সূত্র জনায়, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ঋণের কঠিন শর্ত ও উচ্চ সুদ কার্যকর করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সুদের হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কার্যকর করেছে। এর সঙ্গে আগে থেকে অব্যাহত থাকা সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলবৎ রয়েছে।

তাই সব মিলিয়ে এখন সুদের হার দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। এছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়ও কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। অর্থাৎ আগে আইডিএ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যেত ৩৮ বছর আর রেয়াতকাল ছিল ৬ বছর। এখন ৮ বছর কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রেয়াতকাল কমিয়ে করা হয়েছে ৫ বছর। এছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে বার্ষিক শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদহারে ঋণ পেত বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি সময়ে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ ছিল।

কিন্তু এখন সুদহার বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ করেছে জাইকা। তাছাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে রেয়াতকাল ঠিক থাকলেও পরিশোধের সময় ১০ বছর কমিয়ে করা হয়েছে ৩০ বছর।

এভাবে সস্তা ঋণ কমে যাওয়ায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বেশি সুদ বা শর্তযুক্ত ঋণের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে সরকারকে। বেশি সুদ ও শর্তযুক্ত ঋণ যেসব দেশ থেকে নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)-সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক উৎস।-যুগান্তর

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়