দীপক চৌধুরী: আজ ১০ জানুয়ারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ, এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ভারতের গুণী সাংবাদিক ও নেতারা এই বলে আখ্যায়িত করেছিলেন, ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
জাতির পিতার সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বাংলার মানুষ তাঁর ডাকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রাম করেছে। সাম্প্রদায়িকতাকে কবর দেওয়া হয়েছিল ১৯৭১-এ। অথচ এই স্বাধীন দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। আর এখন হুমকি দেওয়া হয়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা যাবে না, ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেওয়া হবে। অথচ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অবাক হয়ে যাচ্ছি, এই দেশে ওদের দুঃসাহস কতো।
ভাষা আন্দোলনের কিছু পরেই ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহারের জঘন্য সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, ইতিহাসে আরও নমুনা দেখতে পাই আমরা। শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মুসলীম লীগের ওয়াহিদ্দুজ্জামান। তিনি যখন দেখলেন এই বেপরোয়া যুবকের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হবে, তখন অর্থের পাশাপাশি ধর্মাস্ত্র ব্যবহারে তৎপর হয়ে উঠলেন। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘জামান সাহেব মুসলীম লীগ যখন দেখতে পেলো তাদের অবস্থা ভালো না, তখন একটা দাবার ঘুঁটি চাললেন, আনলেন ধর্ম। বড় বড় আলেম, পীর ও মওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। গোপালগঞ্জে আমার নিজের ইউনিয়নে পূর্ব বাংলার এক বিখ্যাত আলেম মওলানা শামসুল হক সাহেব জন্মগ্রহণ করেছেন। আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। তিনি ধর্ম সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। আমার ধারণা ছিল, মওলানা সাহেব আমার বিরুদ্ধাচারণ করবেন না। কিন্তু এর মধ্যে তিনি মুসলীম লীগে যোগদান করলেন এবং আমার বিরুদ্ধে ইলেকশনে লেগে পড়লেন। ঐ অঞ্চলের মুসলমান জনসাধারণ তাকে খুবই ভক্তি শ্রদ্ধা করত। মওলানা সাহেব ইউনিয়নের পর ইউনিয়ন স্পিডবোট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন এবং এক ধর্ম সভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, “আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে।”
জাতির পিতা জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিভেদ বাঙালির শত্রুদের খুশি করবে। ওরা একের পর এক গুজব, মিথ্যা, অপপ্রচার, দুর্নীতির বীজ রোপন করেছে অথচ ওরাই সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণঅভ্যুত্থান’ করার স্বপ্ন দেখে। উস্কানি দেয়। দেশে তো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে দু’বার। একবার হয়েছে ১৯৬৯-এ , আবার ১৯৯০-এ স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদের পতনকালে। আজকের এই সুন্দর দিনে মনে প্রশ্ন জাগে, আজ স্বাধীনতা অর্জনের পঞ্চাশ বছরের মাথায় আমরা যদি অন্য বিষয় নিয়ে ‘কলহে’ যুক্ত হই তাহলেই কী অপশক্তি সুযোগ নেবে না? এটা তো স্বীকার করতেই হবে, নগরবাসী অনেকে বিশ^াস করেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের যে প্রতিবাদ সভা ও বক্তৃতা শুনলাম তাতে নানা প্রশ্ন উদয় হয় সামনে। এর প্রতিবাদে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মুখ বন্ধ করে থাকবেন- এটা আমাদের আশা করা ঠিক হবে না। কারণ, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। ফুলবাড়িয়া মাকের্টের দোকান ও বিভিন্ন বিষয় আদালত ও পুলিশে গড়িয়েছে। সুতরাং আইনকে নিজের গতিতে চলতে দেওয়া দরকার। সম্ভবত ঢাকাবাসীও উল্লেখিত দুজনের বাহাস শুনতে চায় না। ঢাকা দক্ষিণ সিটির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দক্ষতার নতুনত্ব দেখতে চাইছে মানুষ।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক