কামরুল হাসান মামুন : নিঃসন্দেহে কোভিড-১৯ ছিলো ২০২০ সালের সেরা ভিলেন। এখন দেখার বিষয় ২০২১ সালে নায়ক ভ্যাকসিন ভিলেনকে পরাজিত করে মানবজাতিকে প্যান্ডেমিক থেকে রক্ষা করতে পারে কিনা। কোভিড-১৯ এর আগে এবং পরের বিশ্ব কিন্তু এক না এবং এক থাকতে পারে না। যেকোনো বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য মানুষকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্য দিয়ে আরেকটি লেভেলে যাওয়ার একটা কোয়ান্টাম জাম্প ঘটে। কিন্তু এর জন্য একটা প্রাইস মানি আছে। এই প্রাইসটা এইবার একটু বেশিই হয়ে গেছে। আসলে রোগ বালাই হলো প্রকৃতির মাঝে ব্যালেন্স আনার একটা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমরা প্রকৃতির অনেক প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থানে হানা দিয়ে প্রকৃতির ব্যালান্স নষ্ট করে ফেলছি। ১৯৫০ সালেও Human population ছিল ২ বিলিয়নের কম। হাজার হাজার বছরে মানুষের সংখ্যা হয়েছে ২ বিলিয়নের মতো। আর গত ৭০ বছরে মানুষের সংখ্যা ৫.৫ বিলিয়ন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫ বিলিয়ন। কল্পনা করা যায়? এই প্যান্ডেমিকের সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হয়েছে বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যেও একটি সুসংবাদ হলো শিক্ষায় একটা টেকনোলোজিক্যাল বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। অনলাইন শিক্ষা এখন অন্য এক উচ্চতায় উঠে গিয়েছে।
আমার ধারণা পৃথিবীব্যাপী কনফারেন্স আয়োজন এবং যোগদান অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন ঢ়যুংরপধষষু আমাদেরকে আর বিদেশে যেতে হবে না। নিজ ঘরে থেকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে আয়োজিত কনফারেন্স এটেন্ড এবং বক্তা হিসেবে লেকচার দিতে পারব। আমি নিজেই টক্ দিচ্ছি এবং অন্যদের গেস্ট হিসেবে টক্-এর আয়োজন করে ছাত্রীদের তাদের লেকচার শোনাতে পারছি। তবে অনেকে বলার চেষ্টা করছে কেবল অনলাইন বেসড উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়তো তৈরি হয়ে যাবে। তবে এইটা নিয়ে আমার একটা ‘তবে’ আছে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নয়। সেইটার আলাদা একটা রিদম আছে। ছেলেমেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শুধু পড়াশুনাই শিখে না। মানব ইতিহাসের সাফল্যের মুলে রয়েছে মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিকতা শেখা একটা অত্যন্ত গুরুত্যপূর্ণ একটা কম্পোনেন্ট। সেইজন্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য যখন রেকমেন্ডেশন লিখি তখন একটা সেকশন থাকে শিক্ষার্থী গ্রুপে কাজ করতে পারে কিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রতিষ্ঠান জানতে চায় শিক্ষার্থীর লিডারশিপ কোয়ালিটি আছে কিনা। তাই ক্যাম্পাস নধংবফ শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পর হয়তো এইসবেরও সমাধান হয়ে যাবে। মানুষ ঘরে বসেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারবে। ইন ফ্যাক্ট বাংলাদেশে বসে মঙ্গোলিয়ার ফ্রেন্ডদের সঙ্গেও আড্ডা দিতে পারবে। শিক্ষা ছাড়া অনলাইন শপিং-ও একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি অফিস আদালতের কর্মস্থলেও অনলাইনের মাধ্যমে যোগদানের সুযোগ এসেছে। অনেক কাজ এখন বাসায় বসেই সেরে ফেলা যাবে। করোনা না আসলে এইসবের মাস স্কেলে পরিবর্তন আস্তে হয়তো অনেক সময় লাগতো।