সুলতান র্মিজা : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পক্ষে মৌলবাদীদের বিপক্ষে আস্তে আস্তে প্রতিবাদ বাড়ছে, এসব প্রতিবাদকারীদেরও রয়েছে আবার ব্যালেন্স নীতি, কৌশলি বক্তব্য, যা দিয়ে মোটেও বিশ্বাস যোগ্য নয় মৌলবাদ দমন হবে। হাইকোর্টের সামনে থেকে যেদিন থেমিসের ভাস্কর্য সরানো হলো মূলত সেদিনই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকতে দেওয়া যাবে না আন্দোলনের সূচনা হলো, এই বাস্তবতা লীগে থাকা যারা সেদিন বুঝতে পারেনি কিংবা ভাস্কর্যের নির্মাতা মৃনালের ছাত্রদলের সম্পৃক্ততা বা মানহীন ভাস্কর্য ইত্যাদি নানান অযুহাত দেখিয়ে ভাস্কর্য স্থাপন একটি চক্রান্ত বলে আখ্যায়িত করে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার পক্ষে মত দিয়েছিলো, মূলত সেটাই ছিলো পরবর্তি বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া আন্দোলনের স্বীকৃতি প্রদান। আমরা সেদিন বলেছিলাম, ভাস্কর্য এটা ভালো হয়নি, এটা বাদ। ভালো মানের একটা তৈরি করে ওইখানে ভাস্কর্য রেখে দেওয়া হোক তারপরেও কোনো ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, মৌলবাদ জঙ্গিবাদীদের কথায় থেমিসের ভাস্কর্য উচ্ছ্বেদের ফলাফল রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলকর কিছু বয়ে আনবে না। সরকার প্রধান সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেছে ব্যাস।
আজকে কী হচ্ছে? বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রাখার জন্য বঙ্গবন্ধুর দলের আন্দোলন করতে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর দলের কতিপয় লোকের দাবি জানাতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃতাধীন সরকারের কাছে, গ্রেপ্তার করতে হবে মৌলবাদী জঙ্গি, ধর্ম ব্যবসায়ী মামনুল হক, চর-মোনাইয়ের চোর রেজাউল করিমকে। বিষয়টা যে কতোটা দেউলিয়া তত্ত্বের প্রমাণ উপস্থাপন করে, চিন্তা করলে তা মাথা ঘুরিয়ে যেতে পারে যে কারো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সু-সময় চলছে এক যুগ ধরেই, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পরে এই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা তথা মুক্তিযুদ্ধ অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষের বড় রাজনৈতিক দলটি চরম দুঃসময় অতিক্রম করেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনা দূরের কথা, প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর নামের চর্চা নিষিদ্ধ ছিলো এই দেশে, তখনো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্ত অবস্থানের ফলে সব কিছুই হয়েছে রিস্ক নিয়ে। আজকের সু-সময়ের মতো এতোটা বৈকলাঙ্গ পরিস্থিতি চোখে পড়েনি।
চরমোনাইয়ের চোরের কী অবস্থা এখন জানি না, অথচ লম্পট বাস্টার্ড, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চেহারা দেখতেই কুকুরের মতো ধর্ম ব্যবসায়ী মানুনুল হক প্রতিদিন কথা বলেই যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, সরকারে রাজনৈতিক দলে সুসময় অতিবাহিত করা দল আওয়ামী লীগ নীরবে মুলো চিবাচ্ছে। বিষয়টা যে কতোটুকু রক্তক্ষরণের তা কল্পনা করাও অনেক কষ্টের। সোজা কথা, বাংলাদেশ যদি কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র হয়, তাহলে তার নাভী হলো আওয়ামী লীগ, হৃদপিণ্ড হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, সেই হৃদপিণ্ডের সম্মানহানি করার মতো লোক যদি বাস্তবায়ন পরের গল্প স্রেফ কটুক্তি করে পাঁচ মিনিট সোঁজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তখন শেখ হাসিনার সরকারের এতো উন্নয়ন দিয়ে রাষ্ট্র, আওয়ামী লীগ তথা আগামী প্রজন্মের কী লাভ হবে? দেশে মুক্তিযুদ্ধের আর্দশিক চার নীতির চর্চা আছে, আগামী দিনে থাকবে, আর থাকবে কী করে? তাদের সংখ্যা দেখেই আওয়ামী লীগের বুদ্ধিদাতা পরামর্শক প্যানেল হেগে মুতে কাপড় ভাসিয়ে ফেলেছে।
না হলে, কেন ওইসব নীতি নির্ধারনি পরামর্শকেরা বুঝতে পারে না, ঢাকা শহরে ২০১৩ সালের ৫ই মে যতোটা লোক হয়েছিলো, এটাই তাদের ফিগার, এমনকি গত কয়েকদিন আগে যারা এসেছিলো এটাই তাদের ফিগার। সংখ্যা কতো হবে। ৩০-৩৪-৫০ লাখ, তোর ১৮ কোটির মধ্যে এর শূন্য শতাংশ কতো। ধরেন এই ৫০ লাখ লোক যদি এই দুনিয়াতেই না থাকে, তাহলে কী বাংলাদেশের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। যদিও ৫০ লাখ দুনিয়া থেকে বিদায় করার দরকার নেই, ডজন কয়েক বিদায় করে দিলেই সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না কেন, আগামীর প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কী কোনো দ্বায় নেই? ধর্মের ঢালে, ধর্মের নামে অসভ্য, বর্বর, জল্লাদেরা নানান ধরনের বাধা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, তখন আমরা উন্নত দেশের উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবো?
ধরেন কোনো কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পর্ব শেষ হলো, সেই বাংলাদেশের কী হবে। সেই বাংলাদেশ কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শ ধারণ করা বাংলাদেশ থাকবে। সেই বাংলাদেশে কী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকবে। সেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অস্তিত্ব রাখবে তারা? সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, অমুক লীগ, তমুক লীগ বা আজকে যারা ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে না ঘাটানোর পরামর্শ দিচ্ছে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণি আমলা কামলাদের কথা বলছি, তারা তখন কার পক্ষে থাকবে। আসলেই মাঝে মধ্যে নিজেরে খুব ইডিয়টস মনে করি, হুদাই কি বালের হাউ কাউ করি কিছু মাথায় ঢুকে না। বিশ্বাস করি রিস্ক আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে, আওয়ামী লীগের আর হারানোর কিছু নেই, কী হবে, না হবে ওই সব ভাবনা ছেড়ে দিয়ে আগামীর একটি নির্ভেজাল রাজাকার শাবক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কানে তোলা দিয়ে, ধর্ম ব্যবসায়ী দোকানদারের রাজনীতি বন্ধ করার ঘোষণা স্পষ্ট করে দিতে হবে, আবেগ অনুভূতির মায় রে বাপ, বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মের চর্চা চলবে, মোটেও জামায়াতে ইসলামীর চর্চা চলবে না।
পথে ঘাটে মাঠে ধর্ম ব্যবসায়ী ওয়াজি জামায়াতে ইসলামের চর্চাকারী, রাজাকার সাঈদিকে আলেম বিশ্বাসকারী কোনো বর্তমান আলেমের ওয়াজ ব্যবসা চলবে না, কথায় কথায় ধর্ম অবমাননার হুজুগ তুললেই উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, ধর্মকর্ম ছাড়া কোনো আলেম ওলামা অন্য কোনো বিষয়ে নাক গলাতে পারবে না। সোজা কথা ধর্ম পবিত্র জিনিস, ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকবে। অন্য কোনো জায়গায় ধর্মের দোহাই, গ্রন্থের দোহাই, নবীর দোহাই চলবে না। যারা ওইসব করবে তাদের কে দুনিয়া থেকে দোযখে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যদিও আওয়ামী লীগ এখন যেই জায়গায় আছে সেখান থেকে ওইসবের বাস্তবায়ন করবে না। আর না করলে এরপরের সত্যটুকু হলো, আগামীর বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে একটি তালেবানী রাষ্ট্র। তাও আবার মোট জনসংখ্যা মাত্র ১-২ শতাংশ লোকের দাপটে ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদীদের কারণে।