রাশিদুল ইসলাম : [২] রোবরার সন্ধ্যায় ৮৭ বছরের সাজ্জাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে কোভিডের সংক্রমণ। বাদশা ওয়াজিদ আলি শাহ ও বেগম হজরত মহলের লখনৌ নবাবি ঘরানার শেষ বংশধর ছিলেন সাজ্জাদ। তাকে যুবরাজ বলেও ডাকতেন পরিবারের লোকজন। টাইমস অব ইন্ডিয়া
[৩] ইংরেজদের কাছে সিংহাসন খুইয়ে এই নবাব একদিন এসে পৌঁছেছিলেন কলকাতায়। সাজিয়ে তুলেছিলেন তার সাধের মেটিয়াবুরুজকে। সম্রাট শুধু নয়, নবাব ছিলেন একজন শিল্পী, গায়ক, গজল লিখিয়ে, সুরকার-নাট্যকার, সাহিত্যিক, ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। সংস্কৃতিমনস্ক নবাব মেটিয়াবুরুজেই তৈরি করেছিলেন লখনৌয়ের নবাবি ঘরানার ছোট সংস্করণ। সেই বাদশা ওয়াজিদ আলি শাহকে কলকাতা চেনে অওয়াধি বিরিয়ানির রূপকার হিসেবেও। লখনৌয়ের নবাব আর নেই। তবে তার প্রপৌত্র তথা নবাব বিরজিস কাদেরের ছেলে সাজ্জাদ আলি মির্জা লখনৌ ঘরানার শেষ ঐতিহ্যকে বহন করছিলেন এতদিন।
[৪] বাদশা ওয়াজিদ আলি শাহ ও বেগম হজরত মহলের লখনৌ নবাবি ঘরানার শেষ বংশধর ছিলেন সাজ্জাদ। তাকে যুবরাজ বলেও ডাকতেন পরিবারের লোকজন। তার স্ত্রী বদর-উন-নিশা লখনৌয়ের বিখ্যাত খানদানি ঘরানার মেয়ে। সাজ্জাদ ও বদরের দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তার এক মেয়ে ফজল নাকভি পেশায় লেখিকা।
[৫] এক সপ্তাহ আগেই করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছিল সাজ্জাদের। শ্বাসের সমস্যা ছিল তার। সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে উর্দু নিয়ে ডক্টরেট করেছিলেন তিনি। ওয়াজিদ আলি শাহের সাহিত্য ও সংস্কৃতির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল যুবরা সাজ্জাদের উপরেই। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়েতেই উর্দুর শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। অবসর নেন ১৯৯৩ সালে।যুবরাজ সাজ্জাদের পরিবার জানিয়েছে, ২০১৭ সালে শেষবার লখনৌ গিয়েছিলেন তিনি। ওয়াজিদ আলি শাহের বেগম হজরত মহলকে নিয়ে তৈরি ২৬ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারির অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তাঁর শেষবার লখনৌ যাওয়া। কলকাতার মেটিয়াবুরুজে সিবতাইনাবাদ ইমামবাড়ার ট্রাস্টি ছিলেন সাজ্জাদ। মেটিয়াবুরুজে ওয়াজিদ আলি শাহের সংস্কৃতিকে এগিয়ে যাওয়ার সবরকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
[৬] বহু গুণে গুণী ছিলেন যুবরাজের সাজ্জাদ। তাঁর ছেলে ইরফান আলি মির্জা জানিয়েছেন, উচ্চ শিক্ষিত, শিল্প-সংস্কৃতি মনস্কই শুধু নয়, খেলাধূলাতেও অসীম আগ্রহ ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন ভারতের বিলিয়ার্ড ও স্নুকার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সচিব। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিলিয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন ও উত্তরপ্রদেশের বিলিয়ার্ড ও স্নুকার অ্যাসোসিয়েশনেরও প্রধান ছিলেন তিনি।
[৭] ১৯৬৩-৬৪ সালে কলকাতায় প্রথম অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপের রেফারি ছিলেন যুবরাজ সাজ্জাদ। একসময় জাতীয় বিলিয়ার্ড ও স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপেরও চিফ রেফারি ছিলেন তিনি। আইবিএসএফ বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ, এম এম বাগ ট্রফির উদ্যোক্তা ছিলেন তিনিই। নিজের মেয়েকেও স্নুকারে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন সাজ্জাদ। মেয়েদের পড়াশোনা ও খেলাধূলায় কোনওরকম বিধিনিষেধ আরোপ করেননি তিনি। নবাবি কায়দায় মহিলাদের অন্দরবাসে বন্দি থাকার ঘোর বিরোধী ছিলেন সাজ্জাদ। তিনি ছিলেন মুক্তমণা। তাঁর মেয়ে মঞ্জিলাত ফতিমা ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি ১৯৮০ সালে জাতীয় স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন। দেশে বিলিয়ার্ড ম্যাগাজিনেরও পথিকৃৎ ছিলেন ওয়াজিদ শাহ-র প্রপৌত্র সাজ্জাদ আলি মির্জা।