শাহজাদ হোসাইন মাসুম : এটি একটি সরকারি হাসপাতালের আই সি ইউর ভিতরের ছবি। কোন সেট আপ করা ছবি নয়। সি সি টিভি মনিটর থেকে নেওয়া। এই নার্সিং ষ্টাফ জানতেন না আমি মনিটরের সামনে বসা। ভিতরে আরেকজন কনসালট্যান্ট তার কাজে ব্যাস্ত ছিলেন। এটি আমার ছবি নয়। কাজেই একে আত্মপ্রচার বলার চেষ্টা করে লাভ নেই।
কেন আমি এই ছবি পোষ্ট করছি, এটাইতো আমাদের স্বাভাবিক কাজ, এটা বলা যেতেই পারে। ব্যাখ্যায় যেতে চাইনা। বিরক্ত হলে এড়িয়ে যাবেন। এই ছবি তাদের জন্য উৎসর্গ করা যারা বলেছিলেন আমরা কোভিড আই সি ইউর ভিতরে রোগি নিয়ে দরজা বন্ধ করে রোগিকে মেরে ফেলছি। আমি তখনও বলেছিলাম, না, আমরা চেষ্টা করছি, পারছি না। আমরা বারবার হারছি। আমরা ব্যার্থতা আর অপমানের গ্লানিতে ধূলিশয্যায় শয়ন করেছি, আবার উঠে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা ঢাল তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আমার ডাক্তার ভোরে রোগিকে মৃত ঘোষনা করে বের হয়ে এসেছে। সকালে সে আমার সামনে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। কত নার্সিং ষ্টাফ আমার কাছে এসে কেঁদেছে। আমার সামান্য শক্তি দিয়ে আমি তাদের আগলে নিয়ে সামনে যাবার চেষ্টাটা ধরে রেখেছি। কতটা পেরেছি জানিনা। পুরা প্রক্রিয়ায় অনেকের ভালোবাসা যেমন পেয়েছি অনেকের ঘৃনাও অনুভব করেছি। দুটিকেই প্রাপ্য বলে মেনেছি। আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, কোন ক্ষতিপূরন নয়, প্রনোদনা নয়, চাই সাহস, উৎসাহ আর ভালোবাসা। খুব একটা পাওয়া যায়নি। এর মাঝেই রোগির স্বজনদের ভিডিওচিত্রে সারা দেশে নিন্দার ঝড় বয়েছে, কারো আক্রমনে চিকিৎসকের প্রান গিয়েছে, শারীরিক লাঞ্ছনাটা উপরি পাওনা হিসাবে এমনি পেয়েছি আমরা।
শুধু দাবি ছিল, ডিউটি আর কোয়ারেন্টাইনের সময় পরিবার থেকে দূরে সম্মানজনক আবাসন আর নিরাপদ ভদ্রস্থ খাবার। সেটা দেওয়া হয়েছিল। আশা আছে শেষ অবধি হয়তো আবার পাওয়া যাবে।
আমাদের হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য মান সম্মত সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করেছেন। রোগির কাছে যেতে এই বাধাটা আমরা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত অনুভব করিনি। অন্যান্য লজিষ্টিক এবং প্রশাসনিক সাপোর্টটুকু এখন পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন। রেশনিং এই সময়ে থাকবেই, এটাতো মানতে হবে। তাঁর জন্য আমাদের আন্তরিক ভালোবাসা।
জি, এটি একটি সরকারি হাসপাতালের আই সি ইউর ভিতরের ছবি। এই নার্স জানেন না কেউ তাকে দেখছে। তাকে চালাচ্ছে তার বিবেক, তার দায়িত্ববোধ। এইটুকু যদি এই দেশে যাদের থাকা দরকার তাদের সবার থাকে তাহলে আর কিছু লাগবে না। তাই না?
পুনশ্চ: গতকাল আর পরশু এই দুই দিনে তিনজন চিকিৎসক কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনা এই দেশ থেকে সহসা যাবার কোন কারন নেই। যা শুরু থেকে মেনে নিজেকে রক্ষা করেছেন তাই মেনে চলতে থাকুন। আমরা না বলা পর্যন্ত। আমরা বলবো। লুকানোর কারন আমাদের নেই।
ভালো থাকুন সবাই। 🍂
ফেসবুক থেকে নেওয়া :