সুজন কৈরী: [২] কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশ জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চার পুলিশ সদস্যকে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে র্যাব।
[৩] সোমবার সন্ধ্যায় র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের গুলিতে সিনহা নিহতের ঘটনায় তার বোনের করা মামলায় চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এই চারজনকে দশ দিনের রিমান্ডে নেয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন। এবিষয়ে বুধবার শুনানি শেষে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
[৪] র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আদালত সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১০ দিনের মধ্যে সকল কার্যক্রম জানাতে বলেছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা এরই আলোকে কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু এই সময় উন্মুক্ত করার জন্য আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেছে। অর্থাৎ আদালতের বেধে দেয়া সময়সীমা উন্মুক্ত হলো।
[৫] র্যাব গণমানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে সেই হিসেবে এই মামলাটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করবে। মামলার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করা। পাশাপাশি কী কারণে অনাকাক্সিক্ষত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে র্যাব কাজ করছে।
[৬] আশিক বিল্লাহ বলেন, রোববার জামিনে মুক্তি পাবার পর সিনহা নিহতের ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে প্রথমে শিপ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শিপ্রা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি কথা বলেছেন। শিপ্রা বলেছেন, এটি তার জীবনের একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও তিনি বিচার দেখে যেতে চান। প্রয়োজনে ন্যায়বিচারের স্বার্থে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
[৭] র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ঘটনার পর থেকে তারা মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত। এই কারণে তাদেরকে বিশদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রæতই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপরই তিন অভিযুক্তের রিমান্ডের ক্ষণগননা শুরু হবে। কারণ একটি ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সাক্ষী। তেমনি মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ অন্যতম সাক্ষী।
[৮] সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবার আশিক বিল্লাহ বলেন, মূলত যে চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়ে এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছেন।
[৯] র্যাবের মূখপাত্র বলেন, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার সাহা, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দ লাল রক্ষিত এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সিফাত এবং শিপ্রা দুজনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। তদন্ত কর্মকর্তা যেহেতু মনে করছেন তদন্তের শুরুতে সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তাই মূল অভিযুক্তদের পর্যায়ক্রমে পরবর্তী সময়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
[১০] সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে আশিক বিল্লাহ বলেন, সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে একটি মাদক মামলা। অন্য দুটি সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশ বাদী মামলা। এই তিনটা মামলা র্যাব তদন্ত করছে। এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। সেই মামলার আলামত ও সাক্ষীসহ সবকিছু র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা বুঝে নেবেন।
[১১] খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ ও ক্যামেরার বিষয়ে র্যাব কী করবে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের আশিক বিল্লাহ বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এসব জিনিস আলামত হিসেবে দেখানো হয়নি। তবে এই ঘটনায় দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারপরই পুলিশের যারা সিজারলিস্ট যারা করেছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
[১২] গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সিনহার বোন পুলিশের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এর আগে সিফাত-শিপ্রার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে পুলিশ। এরমধ্যে দুটি টেকনাফ থানায় অন্যটি রামু থানায়। সিফাত-শিপ্রার বিরুদ্ধে করা পুলিশের তিনটি মামলাও তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে র্যাব।