শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২০, ০৫:২৮ সকাল
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২০, ০৫:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিভুরঞ্জন সরকার : ভারত কী বিপদাপন্ন?

বিভুরঞ্জন সরকার : একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী তৎকালীন প্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশ পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বাবান জানিয়ে একটি বার্তা প্রচার করেছিলেন। সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর ছিল বার্তাটি। বার্তায় যা বলা হয়েছিল তার মোদ্দা কথা ছিল : তোমরা চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে পড়েছো। পালানোর পথ নেই। অস্ত্র সমর্পণ করো ( হিন্দিতে সম্ভবত এমন ছিল : তোম চারি তরফ ছে ঘিরে হুয়া হ্যায় ---হাতিয়ার ঢাল দো )। পাকিস্তানি সেনাকর্তা জেনারেল নিয়াজী ৯০ হাজার সৈন্য নিয়ে সোহরায়ার্দী উদ্যানে নতমুখে আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশের যুদ্ধজয়ের বিউগল বাজাতে সহযোগী হয়েছিলেন।

এই ঘটনাটি হঠাৎ আমার মনে পড়লো ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্ত সংঘর্ষ এবং অন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি দেখে। ভারত কী তবে চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে পড়ছে? ভারতদের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কী ভারতকে শক্তিশালী করতে গিয়ে শেষপর্যন্ত দুর্বল করে ফেলবে? চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে ভারত জুৎ করতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। কোনো গোলাগুলি ছাড়া হাতাহাতির লড়াইয়ে একজন কর্নেলসহ ২০সৈনিকের মৃত্যু, বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ভারতের শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে না।

আমাদের দেশে যারা ভারতবিরোধী, যারা মনে করেন, ভারত আমাদের উন্নতি-সমৃদ্ধির পথে বাধা- তারা বেজায় খুশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ উল্লাস প্রকাশ করছেন। ভাবখানা এমন : ছোট প্রতিবেশীদের সঙ্গে দাদাগিরি ফলাও, এবার চীনের সঙ্গে লেগে দেখো – হাউ ম্যানি রাইস ইন হাউ ম্যানি প্যাডি!

চীন- ভারত বৈরিতা নতুন নয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতার কথা সবাই জানে। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে লড়তে গিয়ে ভারত পরাজিত হয়েছিল। তারপর বহু বছর গত হয়েছে। চীন অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিতে অনেক এগিয়েছে। ভারতও এগিয়েছে। চীনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার শক্তি ভারত হয়তো অর্জন করেছে। তবে যুদ্ধ লাগলে কী হবে বলা মুশকিল।
চীন এখন বিশ্বমোড়ল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকা। আমারিকার সঙ্গে ভারতের দহরমমহরম ভালো। চীন এটাকে ভালো চোখে দেখে না। ট্রাম্প-মোদি দোস্তি ভাব চীনা প্রেসিডেন্টের গায়ে হুল ফোটায়। তাই চীন চায় ভারতকে চাপে রাখতে, আমেরিকা থেকে দূরে রাখতে। এই চাপের কৌশল হিসেবেই চীন এখন ভারতকে বন্ধুহীন করার কূটনীতি, অর্থনীতি অনুসরণ করেছে। প্রতিবেশী প্রায় সবগুলো দেশের সরকার এখন মোটামুটি ভারতবিরোধী। নেপাল তো মহাবিপ্লব করে বসেছে মানচিত্র বদল করে!

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখনও চমৎকার। বলা হয় ‘সর্বোচ্চ' পর্যায়ে! এই ভালো সম্পর্কটা অনেকের কাছে পছন্দের নয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সর্বাত্মক সমর্থন-সহযোগিতা করেছে। এক কোটিরও বেশি মানুষকে আশ্রয় ও খাদ্য জুগিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছে। শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ভারতীয় সেনারা রক্তও দিয়েছে।
এখন আমাদের দেশে কেউ কেউ মনে করেন, ভারত যা যা করেছে, সবই নিজেদের স্বার্থে। পাকিস্তানকে দুর্বল করা ছিল ভারতের লক্ষ্য। শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ভারতের লক্ষ্য পূরণে সহযোগিতা করেছেন। যারা এমন ভাবেন তারা কী স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন?

ভারত আমাদের দুর্বল রাখতে চায়, আমরা তাদের অনুগত থাকি, তার জন্য আমাদের নির্ভরশীল রাখতে চায়। হতে পারে এটাই সত্য।

প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ না হয় ভারত অনুগত। তারা জাতীয় স্বার্থ না দেখে ভারতের স্বার্থ দেখে। কিন্তু ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল – এই ২১ বছর তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। ওই সময়কালের সরকারগুলো কী জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছিল? মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা মিছিল করে কয়ফোটা পানি পেয়েছিলেন? সফিউল আলম প্রধান নামের এক নেতা কয়দিন পরপর ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করতেন। তার অর্জন কী? ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের যতটুকু যা স্বার্থ আদায় তা আওয়ামী লীগই করেছে।

এটা ঠিক যে, ভারতের বিগব্রাদারসুলভ আচরণ আছে। তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আন্তরিক নয়। তারা আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা দেয় না। সীমান্তে অসহায় মানুষদের হত্যা করে। আরো নানা অপরাধ করে। প্রশ্ন হলো, আমরা কেন ভারতকে একটু শিক্ষা দিতে চেষ্টা করি না? আমরা কেন শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ভারত যাই? আমরা কেন ভারতের গরু, ভারতের পেঁয়াজ, চাল-চিনিসহ আরো বহু পণ্য বৈধ-অবৈধ্য পথে আমদানি করি? আমরা আনন্দ-ফূর্তির জন্য, কেনাকাটার জন্যও ভারতে গিয়ে বৈদেশমুদ্রা দিয়ে আসি। জাতি হিসেবে আমরা যে কপট, আমাদের নীতি-নৈতিকতা যে দুর্বল – সেটা বুঝতে পেরেই কী ভারত আমাদের লজ্জা দিয়ে আনন্দ পায়?

এখন চীনের ওপর ভর করে কী আমরা লজ্জা নিবারণ করতে উৎসাহ বোধ করছি? যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের জন্য আরও বড় লজ্জা অপেক্ষা করছে বলে আমার ধারণা। বৈশ্বিক রাজনীতির হালহকিকত দেখে মনে হয় না যে, চীনের বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা সহজে বাস্তবায়ন হবে। যারা আমেরিকার মোড়লগিরি থেকে মুক্তি চায়, তারা চীনের মোড়লগিরি মেনে নেবে, তা কী কোনো বিশেষ তত্ত্ব বা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি?

প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্ররোচিত করে খোঁচাখুঁচি করে ভারতকে সাময়িক অস্বস্তি দিতে চীন সক্ষম হলেও চূড়ান্তভাবে ভারতবধে উদ্যোগী হলে চীনের জন্য সেটা সুখকর অভিজ্ঞতা হবে বলে মনে হয়।

করোনা-উত্তর পৃথিবী বদলাবে। অনেক কিছুই আগের মতো থাকবে না। রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্যও বদল হবে। কিন্তু সেটা চীনের অনুকূলে যাবে কী? করোনার উৎপত্তি ও বিস্তার কিন্তু চীন থেকেই।
ওয়েট অ্যান্ড সি!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়