মুনশি জাকির হোসেন : করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর সপ্তাহে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে আলোচিত, আতঙ্কিত, শঙ্কিত ছিলো এখানকার চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালে কর্মরত অন্যরা এবং তাদের পরিবার পরিজন। এর পরের সপ্তাহেই দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টাতে থাকে। শুরুতেই সরকার ‘কী ওয়ার্কারস’ নামে নতুন শব্দ সংযোজন করে তাদের জন্য বিশেষ বিধান ঘোষণা করে, আইনে তাদের বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রাখা হয়। এমনকি তাদের পরিবার পরিজনের জন্যও বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়। এখন হাসপাতালে কর্মরত কেউই ভেতরের তথ্য প্রকাশ করতে পারে না, বিশেষ করে কতোজন মারা যাচ্ছে, কতোজন রোগী আসছে। এ রকম বিধি নিষেধ সবাই মেনে চলে। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলে, নিষেধ আছে। এমনকি বাড়ির লোকজনও জানতে পারে না হাসপাতালের ভেতরের চিত্র। এর পর চার লক্ষাধিক ভলান্টিয়ারের নাম তালিকাভুক্ত করে সরকার। সদ্য অবসরে যাওয়া নার্স, চিকিৎসকের পুনরায় বিশেষ ব্যবস্থায় কাজে যোগদানে সরকার উৎসাহ দিতে থাকে। ব্র্রিটিশ মিডিয়াগুলো করোনা সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারে একধরনের সেন্সর আরোপ করে। পিন পয়েন্ট করে এখন আর সংবাদ প্রকাশ করা হয় না। শুধু পরিসংখানের গ্রাফ দিয়ে সংখ্যাভিত্তিক সংবাদ করা হয়। এর পর করপোরেটরা যে কারণেই হোক এগিয়ে আসে, হয়তো সরকার তাদের অনুরোধও করে থাকতে পারে। এর মধ্যে উবার ট্যাক্সি হাসপাতালের প্রতিটি কর্মচারীর, চিকিৎসক, নার্সদের জন্য দুই সপ্তাহ ফ্রি যাতায়াতের অফার দেয়, টনবৎঊঅঞঝ £২০-এর ফুড ভাউচার দেয়, ঔঁংঃ বধঃও এগিয়ে আসে, আর সাধারণ ফুড ব্যবসায়ীরা সকাল, বিকাল, রাত ফ্রি খাওয়ার সরবরাহ করতে থাকে, বড় বড় সুপার শপ বিভিন্ন ধরনের সবজি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হাসপাতালে পৌঁছে দিতে থাকে, যেখান থেকে কাজ শেষে যার যার প্রয়োজনমতো সে সব পণ্য নিয়ে যায়।
এর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্রিটিশ সরকার প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৮ টায় ঈষধঢ় ভড়ৎ ঘঐঝ পালন করে। যেখানে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে সব মিডিয়া, প্রশাসন, সর্বত্র ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। এ সব কর্মকা-ের ফলাফল কী? উপরের এ সব কর্মকা-ের সঙ্গে অর্থের যতোটা সংশ্লিষ্টতা তার থেকে বেশি জড়িত আন্তরিকতা, পরিকল্পনা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এটি একধরনের আনকনভেনশনাল ওয়ার সিচুয়েশন। এখন হাসপাতালের চিত্র ভিন্ন, সেখানকার চিকিৎসক, নার্সদের মধ্যে সেই আতঙ্ক আর নেই, প্রায় সবাই ফুরফুরে মেজাজে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে কী কী হলো? বাংলাদেশের অতিরিক্ত অর্থ খরচ না করেও আরও কী কী করা যেতো? ম্যোরাল বুস্টা আপের জন্য অনেক কিছুই করা যেতো। বরং উল্টো দেখা গেলো ছয়জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে। এটি দুটো কারণে হতে পারে, প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার অপচেষ্টা অথবা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ফাঁসিয়ে দেওয়া। অনিবার্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার মধ্যেও শিল্প থাকে। কেউ সেটির পরিবেশ তৈরি করতে পারে, কেউ পারে না। সভ্য, অসভ্য, রাজনৈতিক নেতৃত্বের পার্থক্য এখানেই। ফেসবুক থেকে