ম. ইনামুল হক : মানব সভ্যতা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এগোচ্ছে। এ রকম একটা ধারণা অনেকের মনে কাজ করে। এই ধারণা ঢুকিয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আর জ্ঞান এক কথা নয়। যা চিরায়ত জ্ঞান তা থেকে ভিন্নভাবে পরীক্ষাগারের উদ্ভাবনকে বিজ্ঞান বলা হয় এবং এসব নিয়ে নানা বাহাদুরি, পুরস্কার ও ব্যবসা আছে এবং বিজ্ঞানের এই উদ্ভাবনকে ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করা হয়। অন্ধ বিশ্বাসী ধার্মিকরা সহজেই এর প্রতিপক্ষ হয়ে বিজ্ঞানের বাজার সৃষ্টি করে। চলে ধর্ম ও বিজ্ঞানের যুদ্ধ। তবে বিজ্ঞানের বাজার সব সময় সাময়িক। তাই নতুন নতুন উদ্ভাবন লাগে। প্রচারণা লাগে। নতুনটা এলে বলা হয় আগেরটা ফেলে দিন। এভাবে জমা হচ্ছে বর্জ্য। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অভিশাপ এই বর্জ্য। অথচ বিজ্ঞান তার বিশেষ জ্ঞান দিয়ে মানব সভ্যতার উন্নতি করার কথা ছিলো। হয়নি। মানব সভ্যতা বিজ্ঞানের ভারে জর্জরিত হয়েছে। বিজ্ঞান যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারতো সেখানেই সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় এনেছে। বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানুষের মনে ও শরীরে অসুখ বাড়িয়েছে। সারা পৃথিবী এখন হাসপাতাল, অসুখ, ডাক্তার আর রোগীতে বোঝাই। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে তো বটেই।
এমন যদি হতো রোগীরা ডাক্তারের কাছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতেন, দোকানে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতেন এবং বাড়িতে না পেলে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সেবা পেতেন। না তা নয়। সব কিছুতে আধিক্য, সব কিছু অতিরিক্ত। ইউরোপ-আমেরিকায় এ সব সরকারি দায়িত্ব, তাই তাদের কথা বলে লাভ নেই। আমি দেখছি আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যাচারে জর্জরিত। জন্ম ও মৃত্যু একটি চলমান বিষয়, অথচ অনেকে তা সহজে নিতে চান না। বিজ্ঞান ও ধর্ম পরস্পর বিরোধী হলেও এই দুইয়ের ব্যবসাজীবীদের উপজীব্য মৃত্যু। দুর্নীতিপূর্ণ সমাজে অধিকাংশ মানুষ কমবেশি দুর্নীতিতে আশ্রয় নেয়। ধার্মিকরা এসব দুর্নীতিবাজ মানুষকে পরকালের শাস্তির কথা বলে মৃত্যুভয়ে ভীত করে। তাই ধনী-গরিব অধিকাংশ মানুষ অল্প অসুস্থতায় ভয় পেয়ে ডাক্তার, হাসপাতালের আশ্রয় নেয়। অথচ মৃত্যুভয় নয়, প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাঁচলে অনেক কিছুই অপ্রয়োজনীয় মনে হবে। ফেসবুক থেকে