কাকন রেজা: আমাদের দেশেরই সোকল্ড শিক্ষিত কিছু মানুষ করোনা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দোষ দিচ্ছেন নিজ দেশেরই মানুষগুলোকে। তাদের এই দোষারোপের নানা নমুনা দেখছি গণ ও সামাজিকমাধ্যমে। কেউ কেউ ট্রল করছেন, ‘ট্রুডোর মতো রাষ্ট্রপ্রধান চান, তাহলের কানাডার মানুষের মতো হয়ে যান’। কথাটা হয়তো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ঠিক, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে যায় না বা ঠিক নয়। এসব সোকল্ড শিক্ষিতরা খবরে দেখেছেন নিউইয়র্ক লকডাউন করা হয়েছে এবং কানাডাও। আচ্ছা ভাইয়েরা, সে দেশের লোকজন যদি সোশ্যাল ডিসট্যান্স রক্ষা করতে পারতেন, তাহলে কি লকডাউন করতে হতো? নিশ্চিত হতো না। আপনারা পড়েছেন হয়তো বোঝেননি, যে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশে ব্রেকআউটের মূল কারণ প্রথমে লকডাউনে না যাওয়া। তারা মনে করেছিলো তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটা ম্যানেজ করা কঠিন হবে না। এমন চিন্তা ছিলো মারাত্মক ভুল। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে ইউরোপকে। আমাদের সোকল্ড শিক্ষিতরা কি বলতে চান, সরকার সতর্ক না করলে মানুষ সচেতন হবে? না, হবে না। তিন মাস হাতে সময় পেয়েছে সরকার, আমাদের কি প্রস্তুত করেছেন তারা? করেননি। আমরা কি জেনেছি এর আগে সোশ্যাল ডিসট্যান্স কীভাবে পালন করতে হয়? জানিনি। হঠাৎ করেই যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হলো তখন আমাদের সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। উঠে সুফিয়া কাঙালিনির মতো দেখলেন, বেলা নেই। হুঁশহারা হয়ে খুঁজতে শুরু করলেন নিতাইগঞ্জ যাওয়ার পথ মানে নিরাপদ হওয়ার রাস্তা। অথচ তখন প্রায় বেলা নেই, অর্থাৎ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।
সারাবিশ্বের এখন অনুকরণীয়, অনুসরণীয় শাসক হলেন জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী। মানুষের কষ্টে যার চোখে পানি ঝরে। যার নিজ স্ত্রী কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত। তা সত্ত্বেও তিনি দেশের মানুষের কথা চিন্তা করছেন। বলছেন, আপনারা ঘরে থাকুন, আপনাদের খাওয়া, চিকিৎসা সব দায়িত্ব আমার। এমন একজন শাসক, মানুষের ভরসার জায়গা, সান্ত¡নার জায়গা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। আমাদের পাশের ভূখ-। সেখানে মমতা ব্যানার্জী রাত-দিন এক করে দিচ্ছেন নিজ রাজ্যের অধিবাসীদের মঙ্গলে। নিজে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন, তহবিল গঠন করছেন, নিজে সারক্ষণ তদারকি করছেন। মূলত এ এক অসম যুদ্ধ আমাদের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর জন্য। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার চিত্রই প্রায় এক। মোদীজি বাধ্য হয়েই অর্ধমৃত সার্ককে জীবিত করেছেন। কারণ এ সংকটে কে শত্রু, কে মিত্র তা নির্ণয়ের সময় নেই। এ সমস্যা সামলাতে পারস্পরিক সহায়তা ছাড়া উপায় নেই। সমস্যাটি আপাতত স্বাস্থ্যগত, ক’দিন পরই দাঁড়াবে অর্থনৈতিক, তারপর মানবিক। সামনের ডিজাস্টারকে আমরা বোধহয় কল্পনাতেও আনতে পারছি না। যেমন আমরা পারিনি করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কল্পনায় আনতে। আমাদের ভুল আর বিভ্রান্তিতে সময় অনেকটাই চলে গেছে। আমরা কোভিড নাইনটিনের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছি। এখনো যদি রাশ টেনে না ধরি, তবে পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।