গৌতম চক্রবর্তী : মাত্র এক বছর আগের লোকসভা ভোটের হিসাবে দিল্লিতে ৭০-এর মধ্যে ৬৫টি সিটে এগিয়ে ছিলো বিজেপি। তার পরেও পুরো কোবিনেটসহ অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-এমপি সবাইকে দিল্লির ইলেকশনে নামিয়ে দিয়েছিলেন মোদী-শাহ জুটি। সেই সাথে নিজেরাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রাণপণ। কিন্তু এদের সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ হাসিটা হাসলেন এক ছোটখাটো চেহারার মানুষ, যিনি ভারতীয় গণতন্ত্রে ফের কাজ দেখিয়ে ভোট চাওয়া ও কাজ করে জিতে দেখানোর ট্রেন্ড আনলেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল আপনাকে প্রণাম।
আসলে বিজেপির ইস্যু কী? পাকিস্তান আর মুসলমান। এই ইস্যু দুটো সরিয়ে দলটির কাজকর্মে চোখ দিলে চমকে উঠতে হয়। দেশের অর্থনীতি আপাতত কোমায়, তবু অদ্ভুতভাবে আদানি আম্বানিরা জাদু বলে ফুলেফেঁপে উঠছে। গরিব মানুষের ভর্তুকির নাকি দরকার নেই, ওরা না খেটে সব অলস হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বেচারা করপোরেট সংস্থাগুলো হাল আরও খারাপ; তাই তাদের ভর্তুকি প্রয়োজন। এয়ার ইন্ডিয়া বিএসএনএল রুগ্ন তাই বেচে দিচ্ছে, ওইদিকে স্বাস্থ্যবান এলআইসির শেয়ার মার্কেটে ছেড়ে তার বেসরকারি করণের রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। কর্পোরেটের দালালি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করেছে বলে দেখা যাচ্ছে না। এ থেকে মানুষের নজর ঘোরানোর জন্য নিত্যনতুন নানা ধর্মীয় ইস্যু জাতীয়তাবাদের মোড়কে তুলে আনছে।
এই প্রথম কোনো দল বিজেপির মাঠে না খেলে বিজেপিকে তাদের মাঠে খেলতে বাধ্য করল। আপ বিপুল কাজ করেছে, আর সেই কাজ দেখিয়েই ভোট চেয়েছে মানুষের কাছে। ফলাফল এখন সবার সামনে। ভাবুন, আপনার বিজলি পানি, সড়ক, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান চাই, নাকি মন্দির। আপনার পেটে ভাত চাই, নাকি হিন্দুরাষ্ট্র। আপনার পরনের কাপড়, মাথায় ছাদ, নাকি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ। আপনার সন্তানের জন্য সুশিক্ষা, নাকি দাঙ্গা চাই?
আপ কিন্তু পথ দেখালো, বিরোধীরা সেই রাস্তা অনুসরণ করুন, জোট বাঁধুন। মানুষের জন্য কাজ করুন। মানুষের পাশে দাঁড়ান। ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করুণ, ধর্মীয় রাজনীতিকে উন্নয়ন দিয়ে প্রতিরোধ করুন। তখন মানুষ এই বেনিয়াদের দালালদের কাছে কাজের হিসাব চাইবে। উন্নয়নের হিসাবে ভোট হোক। দেখবেন এরা লেজ গুটিয়ে পালাবে। যেমন দিল্লির মানুষ এদের হাল করেছেন, সারা দেশে সেই হাল হবে। বিরোধীরা কি কিছু শিখলেন? বিজেপিকে তাড়ানোর ক্ষেত্র কিন্তু প্রস্তুত, বাকিটা আপনাদের হাতে।
২.ঘেন্নার রূপ কতো তীব্র হতে পারে? ফ্রিতে জল বিদ্যুৎ, শিক্ষা, চিকিৎসা পেয়ে নাকি বেঈমানেরা দেশকে বেচে দিচ্ছে, ভোট দিচ্ছে দেশদ্রোহীদের। ফ্রিতে খেতে পেলে তারা নাকি নিজেদের মা-বোনকেও বেচে দেবে। ফেবুর পাতায় পাতায় এ সব ঘুরছে স্ক্রিন শট হয়ে। দিল্লিতে আপকে ভোট দেওয়ার কারণে ভক্তদের এ সব কান্নাকাটি। তারা মানুষকে ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে সরকার আসলে মানুষের সেবক। সোজা কথায় চাকর। সরকার ট্যাক্স নেয়, বিনিময়ে নাগরিক পরিষেবা দেয়। আপ সরকার জনগণকে যা দিয়েছে সেটাও জনগণের পয়সাই, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পকেটের পয়সা নয়। পাল্টা প্রশ্ন উঠা উচিত ছিলো, বাকিরা কেন পারছে না। দেশের বাকি রাজ্যের সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার এ সব করতে কেন ব্যর্থ। কিন্তু সে সবের ধারেপাশেও কেউ নেই। আমাদের বোধ, বুদ্ধি, চিন্তা, চেতনা আপাতত ধর্ম ও ধর্মীয় রাজনীতি করা নেতাদের কাছে বন্ধক দেওয়া। কেউ এর পক্ষে, কেউবা বিপক্ষে। কিন্তু নিজেদের প্রাপ্য পরিষেবা নিয়ে আমাদের কোনো হেলদোল নেই। আর এখানেই বিজেপির সাফল্য। শুনলাম রান্নার গ্যাস ৮৯৬/- পৌঁছে গেছে। ঘেন্না আর হিংসার কারবারি ও তাদের ছানাপোনাদের না হয় ছেড়েই দিলাম। বাকিরাও কেমন চুপচাপ। আপনার অধিকার আপনার প্রাপ্য পরিষেবা আদানি আম্বানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঘুরিয়ে জমা হচ্ছে স্যার। এর পর পরনের কাপড় নিয়েও যে টান মারবে। আর কতো? এবার ঘুম ভাঙুক। ফেসবুক থেকে