মঈন মোশাররফ : দেশে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন প্রতিরোধে একটি আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হলেও, এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এই আইনে ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তা হেফাজতে শারীরিক এমনকি মানসিক নির্যাতনেরও বিচার চাইতে পারেন। বিবিসি বাংলা
পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের অভিযোগ প্রচুর কিন্তু বিচার চেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন গুটিকয়েক মানুষ। গত সাত বছরে এই আইনে হাতে গোনা কয়েকটি মামলা হয়েছে। নিম্ন আদালত, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এবং পুলিশ সদরদপ্তরে যোগাযোগ করে এই আইন প্রয়োগ করে কতগুলো মামলার বিচার হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে জানান ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে।
জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই আইনটি প্রণয়ন করে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কেউ নির্যাতনের শিকার হলে আদালতে অভিযোগ করতে পারেন। শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে নূন্যতম ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড হতে পারে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, এ আইনে এখন পর্যন্ত কারো বিচার হয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য নেই। একই সঙ্গে আইনে শাস্তির বিধানটি সংস্কারের প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, কারাদণ্ডের পাশাপাশি বলা আছে অথবা জরিমানা। কোনো মামলা যদি শেষ পর্যায় পর্যন্ত যায় এবং একজনের সাজা হয় এবং কারাদণ্ডের বদলে একটা জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া সম্ভব? এমনকি নির্যাতনের কারণে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে সেক্ষেত্রে যে সাজাপ্রাপ্ত হচ্ছে তাকে একলক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া সম্ভব। তো এটা তো ঠিক না।
এ ব্যাপারে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, পুলিশ মারধর করে এটা বাংলাদেশে খুব একটা প্রচলিত বিষয়। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বিরোধী আইনে আমরা দুটি মামলা পরিচালনা করেছি। তবে গত সাত বছরে ঠিক কতগুলো মামলা বা বিচার হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা ও তথ্য জানা না থকলেও ২০১৩ থেকে আজ পর্যন্ত ১৭টি মামলা চলমান আছে বলে জানা গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে এর থেকে বেশি কোনো তথ্য নাই। আইন যখন কোনো মানুষ ব্যবহার করতে পারে না তার মানে ওই আইনটা কার্যকরী নয়। আমরা চাই এ আইনটাকে কার্যকরী করা হোক।