নিউজ ডেস্ক : বড় দলগুলো অংশ নেয়ায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ইতোমধ্যে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্টরা। যুগান্তর
আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রচার কার্যক্রম ভোটের আগ পর্যন্ত উৎসবমুখর হলে প্রার্থীরাই ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। এসব বিবেচনায় প্রার্থীদের নির্বিঘ্ন প্রচার ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরনো মামলায় কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেছেন দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দু’জন নির্বাচন কমিশনার ও কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি ইসির মতোই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও। তারা আচরণবিধির সঠিক প্রতিপালন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ওপর আস্থা বাড়াতে ইসিকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উপজেলা পরিষদ ও সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় ভোটার উপস্থিতি কম ছিলো। তবে রাজধানীর ভোটারদের বড় অংশ শিক্ষিত ও সচেতন। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও ইভিএমের ওপর আস্থা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
নির্বিঘ্ন প্রচার ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইসি প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখছি। আমরা অংশগ্রহণ ও উৎসবমূলক ভোট চাই। আমরা চাই ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিক। প্রার্থীরা সুন্দরভাবে আচরণবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময়ে প্রচার কার্যক্রম চালাক। তারা আচরণবিধি মেনে চললে বিরোধের শঙ্কা থাকে না।
তিনি আরো নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি কঠোর থাকবে। ইভিএম নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ভোটার এডুকেশন প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। সব কর্নারে ইসি কাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার দুই সিটির কয়েকজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, প্রচার শুরুর আগেই শনিবার ঢাকা উত্তরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে একই দলের প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাবিথ আউয়াল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং ইশরাক হোসেন দলীয় কাউন্সিলরদের হুমধি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। এ ধরনের অভিযোগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের থেকেও আসতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় কি হবে, তা নির্ধারণে আজ দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে পৃথক বৈঠক ডেকেছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন ও আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাচন কমিশনকে এখনই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। ইতোমধ্যে দু-একজন প্রার্থীকে ধরে নেয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কমিশনের হাত থেকে নির্বাচন স্লিপ করবে। ভোটের পরিবেশ নষ্ট হবে। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম ভালো পদ্ধতি। তবে প্রার্থী ও ভোটারদের আস্থা অর্জনে বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা ইভিএমের সমালোচনা করেন তাদের ডেকে কথা বলতে হবে, বোঝাতে হবে। এসব এখনই করা দরকার।
প্রসঙ্গত আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ও প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। এদিন থেকে শুরু হবে প্রচার। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা সংবলিত চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে ইসি। পাশাপাশি দুই সিটির রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারাও প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পরই দুই সিটিতে ১৭২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ইসি। এর মধ্যে তফসিল ঘোষণা থেকে আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৩ জন মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। বাকি ১২৯ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে ২৭ জানুয়ারি থেকে ভোটের পরদিন ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইসির কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দু’জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রচার শুরুর পর আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রতিপক্ষের প্রচারে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। এমন লক্ষণ আমরা দেখছি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটির দু’জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন। তবে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা খুব একটা পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই তাদের কার্যক্রমের রিপোর্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দিচ্ছেন। শনিবার সব সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজ নিজ অধিক্ষেত্র পরিদর্শন করেছেন। অনুলিখন : জহুরুল হক