শাহিন আখতার : জন্মলগ্ন থেকেই নারীর ইতিহাস হচ্ছে বঞ্চনা ও নির্যাতনের। আর বিভেদ? সেটাও তৈরি হয় মাতৃকোল থেকে মাটিতে পা দেবার পর পরই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাতৃগর্ভ থেকেই। অতীতে তো অনেক সমাজে যেমন কন্যাসন্তানকে জন্মানোর পর পরই গলাটিপে মেরে ফেলা হতো, তেমনি আধুনিক সমাজে, তবে প্রযুক্তির কল্যাণে কন্যাসন্তান নিশ্চিত হলে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দেয়া হয় না। আবার অনেক দম্পতির তিন-চারটি কন্যা থাকার পরও একটি পুত্রের আশায় আরো সন্তান নেন। অথচ পুত্রের বেলায় তা করা হয় না।
কেননা বংশ রক্ষার যোগ্য কেবল তারাই। আবার পুত্রসন্তান পিতা-মাতার শেষ বয়সের সম্বল হিসেবে বিবেচিত হয় বলেই ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি একটু বাড়তি মনোযোগ থাকে। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, ‘কন্যারা কি তা পারে না, নাকি তা করতে দেয়া হয় না?’ এক্ষেত্রে করতে দেয়া হয় না কথাটিই যুক্তিযুক্ত। কেননা পিতা-মাতার সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকার থাকলে এই বৈষম্য তৈরি হতো না। তেমনি বিয়ের পর নারীদের স্বামীগৃহে বসবাস করার এই সামাজিক রীতিটিও পক্ষপাত তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
এ রকম অনেক সামাজিক রীতি-নীতিই ক্যান্সারের মতো পুরুষতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করছে। নারীদের দৈনন্দিন জীবনে পুরুষতন্ত্র এমনভাবে ঢুকে গেছে যে, নারীর স্বাধীন সত্তা, তারও যে নিজস্ব বিচার-বিবেচনা আছে, তা বোধ করার ক্ষমতা অধিকাংশেরই নেই। তাই পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে (নারীবাদের) নারীর ন্যায্য বা সমান অধিকারের বিকল্প নেই। অর্থাৎ পুরুষতন্ত্রের কাঠামো ভাঙতে (নারীবাদের) বৈষম্যহীন অধিকারের বিকল্প নেই। তবে তার আগে নারীর সমঅধিকার সম্পর্কে সমাজের যে নেতিবাচক ধারণা তা ভাঙতে হবে। (নারীবাদী) নারী সচেতন হতে গেলে বা তার সমঅধিকারের প্রশ্নে যে চুড়ি, দুল, শাড়ি খুলে ফেলতে হবে, পুরুষদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, এমন নয়। নারীর অধিকারের মূল কথা নারী-পুরুষের সমতা। মানুষ হিসেবে সমান সুযোগ ভোগ করা।
একজন নারী যেমন একজন পুরুষ ছাড়া পূর্ণতা পায় না, তেমনি একজন পুরুষও একজন নারী ছাড়া পূর্ণতা পায় না। কেবল একজন নারী ও একজন পুরুষ মিলেই পূর্ণ সত্তা গঠিত হয়। তাই নারী এককভাবে পুরুষের অর্ধেক নয়। বরং পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। সমান অধিকারের ক্ষেত্রে নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার অবকাশ নেই। একে অপরের পরিপূরক ভেবে সমান অধিকার দিলেই পৃথিবীতে সবসময় শান্তির ফল্গুধারা বইবে। লেখক : কবি ও লেখক