শিরোনাম

প্রকাশিত : ১২ মে, ২০১৯, ১০:১৬ দুপুর
আপডেট : ১২ মে, ২০১৯, ১০:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নামে ২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলো প্রতারক

সুজন কৈরী : আউট সোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুস সালাম পলাশকে আটক করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। সিপিসি পুলিশের একটি নতুন ইউনিট। এটি ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারনা ও অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগের ফাঁদ পেতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে পলাশের বিরুদ্ধে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পলাশকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে টয়োটা সেলুন কার, পাঁচটি ল্যাপটপ, তিনটি হার্ড ডিস্ক ও ৬ লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ বিদেশি মুদ্রা এবং নন ব্যাংকিং কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, প্রতারণার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে পলাশকে আটক করা হয়েছে। সে রেক্স আইটি ইন্সটিটিউট আউট সোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিতো। এসব প্রশিক্ষনের আড়ালে চলতো বড় ধরনের প্রতারণা। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠানের বিং পেইড মার্কেটিংয়ের প্রচারনা চালাতো। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিং পেইড মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগ করলে ৫০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত ফেরতের অবিশ্বাস্য অফার দেয়া হতো যা বাস্তবে অসম্ভব। তার প্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহস্রাধিক প্রশিক্ষনার্থীদের ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি এ ধারনা ঢুকিয়ে দেয়া হতো। প্রশিক্ষনার্থীরাও মনে করতো যে কোনো আউট সোর্সিংয়ের কাজ থেকে এ কাজে ১৫ থেকে ২০গুন বেশি লাভ পাওয়া যাবে, তাই তাদের একটি বিশাল অংশ এ লাভের আশায় বিভিন্ন ভাবে টাকা সংগ্রহ করে বিং পেইডে বিনিয়োগ করে। এছাড়া ক্যাম্পেইনের কথা ছড়িয়ে দেয়া হলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীও বেশি লাভের আশায় বিনিয়োগ করে। এভাবে রেক্স আইটি ইন্সটিটিউটের সত্বাধিকারী আব্দুস সালাম পলাশ প্রতারনার মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থী ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা টাকা চাইলে পলাশ বলতো টাকা রি-ইনভেস্ট করা হয়েছে। এই কথা বলে বলে ২-৩ মাস পর শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, সবাইকে মনগড়া একটি হিসেবে দেখিয়ে পলাশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে। তার এসব ভুয়া আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা বেশি বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে থাকে। পরবর্তীতে টাকার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে বিনিয়োগকারীদের আংশিক পেমেন্ট দেয়া হতো। আর বলা হত বাকি টাকা রি-ইনভেস্ট করা হয়েছে। আসলে সে কোনো মার্কেটিং না করে এমএলএম ব্যবসার মতো মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্যদের লাভ দিত। প্রতারণার বিষয়টি অনেকে বুঝতে পারায় পলাশ গা ঢাকা দেয়।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে পলাশ আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালে আইটি ভিশনে ট্রেনার হিসেবে ৯ মাস কাজ করে। পরে ২০১৭ সালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমে সে শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং করালেও পরে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পলাশের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছ। বিষয়টির তদন্ত চলছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ জানিয়েছেন, প্রথমে ফ্রি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে আগ্রহীদের নিয়োগ করা হলেও পরে পেইড মার্কেটিংয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তাদেরকে বলা হতো পেইড মার্কেটিং করতে তাদের পেপোল অথবা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েসহ কার্ড থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু পেপোলের কার্যক্রম নেই, তাই তারা এখনই সরাসরি মার্কেটিং করতে পারবে না। পলাশ দীর্ঘদিন এ পেশার সঙ্গে জড়িত থাকায় তার আমেরিকান একাউন্ট রয়েছে, তার মাধ্যমেই ক্যাম্পেইন চলবে। তাদের সন্দেহ দূর করাতে এ্যাডভারটেন গোল্ড নামক একটি সাইট তৈরি করে, যা দেখতে অরিজিনাল এ্যাডভারটেনের মতো। ভুক্তভোগীদের বলা হয় এ্যাডভারটেন পলাশের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এ সাইট তৈরি করে দিয়েছে, যেখানে সব ভুক্তভোগীদের আলাদা সাব একাউন্ট তৈরি করে দেয়া হয়। এখানে ভুক্তভোগীরা দেখতে পারে যে সে কত টাকা ক্যাম্পেইন বাবদ প্রদান করেছে ও ক্যাম্পেইনের শেষে সে কত পাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ সাইটে কোনো ক্যাম্পেইনই হতো না, সবাইকে মনগড়া একটি হিসাব দেখানো হতো। প্রথম যারা আসতো তাদেরকে বেশি বেশি লাভ দেখানো হতো ও ক্যাশে তাদের পেমেন্ট দিয়ে দেয়া হতো। ফলে তারা আরো বেশি টাকা নিয়ে এসে এখানে ইনভেষ্ট করতো। পরে টাকার পরিমান বেশি হয়ে গেলে তাদের আংশিক পেমেন্ট দেয়া হতো আর বলা হতো বাকি টাকা রি-ইনভেষ্ট করা হয়েছে। আসলে সে কোনো মার্কেটিং না করে এমএলএম ব্যবসার মত কেবল মানুষের কাছে থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে অন্যদের লাভ দেয়া হতো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়