শিরোনাম
◈ সরকারি দপ্তরগুলোতে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরে কড়াকড়ি: কৃচ্ছ্রনীতির অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ◈ ২১ বছর বয়স হলেই স্টার্ট-আপ লোনের সুযোগ, সুদ মাত্র ৪%: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা ◈ ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে: আশিক চৌধুরী ◈ তিন বোর্ডে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ◈ এসএসসির ফল নিয়ে যে বার্তা দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ সৈক‌তের কা‌ছে দু:খ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন ‌বি‌সি‌বির প্রধান নির্বাচক  ◈ ভারত সরকারকে আম উপহার পাঠাল বাংলাদেশ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১৬ কর্মকর্তা বদলি ◈ কল রেকর্ড ট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি, অপেক্ষায় থাকুন: তাজুল ইসলাম ◈ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৫৫ সকাল
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৫৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মিডিয়া নিয়ে সামান্য দুই কথা

আলী রীয়াজ

মিডিয়া এবং প্রচারণার এই যুগে একজন ব্যক্তির কি আলাদা কোনো এজেন্সি আছে? মানে আপনি কি আলাদা করে নিজের মতো করে ভাবতে পারছেন? সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এই সময়ে মিডিয়া, অন্য যেকোনো সময়ের মতোই, আপনার সামনে একটা ন্যারেটিভ হাজির করে এবং করবে। আপনি সেটা গ্রহণ করছেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এজেন্সি আপনার থাকার কথা, যদি না আপনি আগে থেকেই এই ন্যারেটিভ বিশ্বাস করার জন্য বসে থাকেন। মিডিয়ার কাজ হচ্ছে সম্মতি উৎপাদন করা ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’, সেটা কেবল পুঁজিবাদী সমাজেই হবে তা নয়, সমাজতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানেই তা ঘটেছে/ঘটছে।  এখন সারা পৃথিবীজুড়ে গণতন্ত্রের যে ভাটা চলছে সেখানে এই সমস্যা নতুন রূপ নিয়েছে। অগণতান্ত্রিক ও দৃশ্যত গণতান্ত্রিক বা দোআঁশলা ব্যবস্থায় এই কাজে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের দরকার হয় না, সেই কাজ করে ব্যক্তি-মালিকানাধীন মিডিয়া, এদেরকেই আমরা মেইন্সট্রিম মিডিয়া বলে চিহ্নিত করি। মিডিয়া সেটা করে তার কারণ বহুবিধ; আদর্শিক তো অবশ্যই; আছে নিয়ন্ত্রণ, আছে ভীতি প্রদর্শন, আছে ‘শুকিয়ে মারার’ হুমকি। ফলে মিডিয়া, নামে ম্যাস মিডিয়া বা গণমাধ্যম হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো আসলে ‘ডমেস্টিকেটেড’ মাধ্যমের বেশি কিছু নয়। আমি এই ধরনের গণমাধ্যমকে ‘ডমেস্টিকেটেড’ ছাড়া আর কোনোভাবেই বর্ণনা করতে পারছি না, তবে আশা করি অন্যরা এর চেয়েও যথাযথ কোনো কিছু বের করতে পারবেন। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে এর পার্থক্য হচ্ছে গোটা গণমাধ্যম-ক্ষেত্রে (মিডিডয়াস্কেপে) সামান্য দম ফেলার ব্যবস্থা রাখা হবে যাতে করে একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা না হয় এবং বলা যায় যে, মিডিয়ার স্বাধীনতা তো আছে, এটা দোআঁশলা ব্যবস্থায় বেশি দরকার  এ যুগের স্বৈরতন্ত্রেও তা দৃশ্যমান ।  আর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাজের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাধে তুলে নেয় এই ব্যবস্থার রক্ষাকারী আদর্শিক সৈনিকেরা। সৈনিক কথাটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলাম কেননা এদের আচরণে সব সময় একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব থাকে এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে যারা ‘শত্রু’ বলে চিহ্নিত হবে তাদের ‘নিউট্রালাইজ’ করা। এই সৈনিকদের আরেকটা কাজ হচ্ছে একটা ‘অলটারনেটিভ ফ্যাক্টসের’ জগত তৈরি করা, ফেক নিউজের প্রচার করা এবং কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যকে প্রশ্নাতীত করে তোলা। কিছু দিন আগে আমি একটি লেখায় বলেছিলাম, ‘অলটারনেটিভ ফ্যাক্টস হচ্ছে ক্ষমতার প্রকাশ; ক্ষমতাসীনেরা দেখান যে তারা চাইলে এবং তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে তারা সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করবেন। অলটারনেটিভ ফ্যাক্টসের লক্ষ্য হচ্ছে যা সত্য, যা সহজেই দৃষ্ট, যা বাস্তবতা তাকে অস্বীকার করে তার পরিবর্তে একটি মিথ্যাকে গ্রহণযোগ্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই গ্রহণযোগ্যতা তৈরির জন্য যা সহজেই করা হয়, তা হচ্ছে ক্ষমতার প্রয়োগ। সরকার ও তার অনুগতরা ‘আসলে এই ঘটেছে’ বলে একটা মিথ্যাচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হয়।’ আমি একে সেক্রেলাইজেশন বলে থাকি। অর্থাৎ একেবারে ধর্মগ্রন্থের ভাষ্যের রূপ দেয়া।  একজন নাগরিক, স্বাধীন চিন্তার মানুষ হিসেবে আপনার-আমার দায়িত্ব কী? আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে বিকল্প মিডিয়ার সূত্র থেকে এটা বোঝা যে আসলে কি ঘটছে, মেইন্সট্রিমের এই ব্যাখ্যা ঠিক কিনা। কিন্ত স্বৈরতন্ত্র ও দোআঁশলা ব্যবস্থায় আপনার সামনে যখন বিকল্প মিডিয়া যখন নেই তখন কী করবেন? একই সঙ্গে যখন আপনার ভরসার জায়গা যে সোশ্যাল মিডিয়া সেখানে ‘সৈনিকরা’ ইতিমধ্যে সেক্রেলাইজেশনের কাজে নেমে পড়েছে? আমি মনে করি অন্ততপক্ষে এই কাজ থেকে দূরে থাকা হচ্ছে প্রথম দায়িত্ব। একেবারে সহজ ভাবে বললে অনন্ত পক্ষে ‘ফেক নিউজ’ শেয়ার করা এবং এই নিয়ে উত্তেজিত হওয়া বন্ধ করুন। কিন্ত মেইনস্ট্রিম নিয়ে কী করবেন? সেখানেই এই এজেন্সির প্রশ্নটা আসছে। স্টুয়ার্ট হল অনেক আগেই বলেছেন, যে কোনো ম্যাসেজের তিনটি রিডিং আছে, প্রেফার্ড, নেগোশিয়েটেড এবং অপজিশন্যাল। আপনার এজেন্সী ব্যবহার করলে আপনি কেবল প্রেফার্ড রিডিংয়ের বৃত্তে আটকে থাকবেন না। এখন এমন এক সময় যখন আপনাকে-আমকে প্রত্যেকটা ম্যাসেজ নিয়ে ভাবতে হবে।

সম্ভব হলে আপনি একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারেন। কিন্ত সেটা দুরূহ এই কারণে যে এখন সেন্সরশিপটা তো রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে করে না; সেজন্যে অন্য উপায় তৈরি হয়েছে, আউটসোর্সিং। অরুন্ধতি রায় গত বছর অক্টোবরে লন্ডনে নূর এনায়েত খান মেমোরিয়াল লেকচারে যে কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো তার ভাষায়ই উদ্ধৃত করি,

Censorship now has been outsourced to the mob. We have these various groups who simplifz their own identitz, appoint their own spokespersons, decide their own historz, fake their own historz and then start burning cinema halls, attacking people, burning books, killing people,”

তিনি আরো বলেছিলেন, “The state has sort of moved out of the waz of censorship and now it’s the rule of the mob and this is more terrifzing than being hauled up for contempt of court and arguing zour case,”

এই রকম একটা অবস্থায় আপনি মিডিয়ার দেয়া ভাষ্য একবারে প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণ করবেন না আপনার এজেন্সি ব্যবহার করবেন সেটা ভাবা দরকার।     ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়