নাঈমা জাবীন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম সূচনাপাঠ হয়েছিলো ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরাজ কর্তৃক প্রবর্তিত বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে। সে সময় রবিঠাকুর রচিত আজকের আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি, শুধু বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে শাণিত করেনি, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-/ পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান’ ইত্যাদি রচনা বাঙালি জাতীয়তাবোধের সঞ্চারণকে অভিনব চেতনায় উদ্ভাসিত করেছে। ইতিহাসের সত্য হচ্ছে এই, ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই উজ্জীবিত অপরিসীম আত্মত্যাগের মহিমা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মিছিল-মিটিং, পিকেটিং, বিক্ষোভ ইত্যাদির সমন্বিত প্রয়াস জাতিকে স্বাধিকার আন্দোলনের নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। সূত্র : সমকাল
তিনি বলেন, ফলস্বরূপ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৯৫৫ সালের ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিসহ ২১ দফা ঘোষিত হয়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যদের আইনসভা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার করণীয় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন। ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মূলত ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে যে দাবানল প্রজ্বলিত হয়, তারই আলোকে পরবর্তী সব আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বে থেকে বঙ্গবন্ধুই বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক পটভূমি তৈরি করেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৫৬ সালের ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রদেশ প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্বকে পরিহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের সভায় প্রস্তাব পেশ করেন। ৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল বের করা হলে চকবাজার এলাকায় পুলিশ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সামরিক শাসন জারির পর থেকে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সময় বন্দি-জীবনযাপন করেন। ১৯৬০ সালের ৭ ডিসেম্বর জেল থেকে মুক্তিলাভ করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে জোরদার করার লক্ষ্যে বিশিষ্ট ছাত্রনেত্রীদের সম্পৃক্ত করে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আবারও ১৯৬৪ ও ’৬৫ সালে বিভিন্ন সময় কঠিন জেল-জীবনযাপনের পর মুক্ত হয়ে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :