রবিউল আলম
বাঙালি জাতির জাগরণে আমরা পেয়েছি ভাষার মাস। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ রোপণ হয়েছে। ’৭১-এ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বাংলার স্বাধীনতা। পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থার অবসানের মাধ্যমে বাংলার নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়। বাঙালি আশায় বুক বেঁধেছিলো দেশের উন্নয়ন হবে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে দেশমুক্তি বিফলে যেতে পারে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্ট সেই আশা-আকাক্সক্ষার ওপর গুড়েবালি দিয়ে দিলো হায়েনার দল বাঙালির জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে। নেতৃত্ব পরিবর্তন হলো, কিন্তু নতুন বোতলে পুরনো মদ। একাধিক রাজনৈতিক দল থেকে পূরণ করা হলো সরকার, রাজনৈতিক দলের নামে সৃষ্টি করা হলো রাজনৈতিক ক্লাব। শুরু হলো জনসেবার নামে লুটতরাজ। দেশের সর্বসাধারণকে জিম্মি করা হলো হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে, নাম দেয়া হলো গণতান্ত্রিক সরকার। নামে গণতন্ত্র হলেও চললো অঘোষিত মিলিটারি শাসন। হ্যাঁ-না ভোট, পাতানো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও শেষ রক্ষা করতে পারলো না। ১৯৮২ সালে আবার সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এরশাদ। মানুষ পরিবর্তন হয় কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। আবারও দেখা গেলো একাধিক রাজনৈতিক দলের টোকাইদের নিয়ে রাজনীতি। ’৮৬-র নির্বাচন থেকে নির্বাচন বয়কট শুরু হলো। শুরু হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন, নির্বাচনও হলো স্বৈরাচারী সরকারের নাম দিয়ে এরশাদের পরিবর্তন হলো। নেতার নীতির পরিবর্তন নেই, জাতীয় পার্টির সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে বিএনপির সাইনবোর্ড লাগিয়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও জুয়ার কোটের মানুষগুলোর পরিবর্তন হলো না। যারা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনলো তাদের কোন প্রয়োজনীয়তা বিএনপি-জামায়াত সরকারে হলো না। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পরেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছিলো না। তবে কিছু যে পরিবর্তন হয়নি আমি তা বলবো না। জাতির জনক হত্যার বিচার হয়েছে, দেশের উন্নয়নের চাবি সরকারের হাতে এসেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও সব হারিয়ে যায়। অনেক দল পরিবর্তনকারী নেতার নাম উল্লেখ করা যায়, তাদের নাম উল্লেখ করার প্রয়োজনও মনে করি না এবং কাগজেও ধরবে না। দল, মত, নেতা ও মানুষের পরিবর্তন হয়, কিন্তু মানসিকতার নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কী পরিবর্তন হয় দেখার বিষয়। এখন পর্যন্ত সে আশায় গুড়েবালি। পরিবর্তনের বাণী ও আশার আলো দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু তার একার পক্ষে কতোটুকু সম্ভব। যাদের বিশ্বাস করে নেতা ও মন্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন, বিশ্বাসের মর্যাদা কতোটুকু রাখবেন এবং রাখতে পারবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
আপনার মতামত লিখুন :