অসীম সাহা
কবিতা এমন শিল্প, যাকে বিশেষরূপে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। কবি বড় কিংবা ছোট, তার পরিমাপ করবে কে? মহাকাল ছাড়া অন্য কোনো বিচারক নেই। তাই যে কোনো কবির কাব্যিক বিশ্লেষণে তার অন্তর্কেন্দ্রে আলো ফেলে দেখা যেতে পারে। তাতে যদি প্রাপ্তির কিছুটাও খুঁজে পাওয়া যায়, তাকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করাটাই কবির প্রতি যথার্থ মর্যাদা দান বলে আমি মনে করি।
রোকসানা সুখীর কবিতাতে আলো ফেলে আমরা যে বিষয়গুলো দেখতে পাই, তা নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রত্যেক কবির কবিতার বিষয়ের মতোই দেশ, মাটি কিংবা ব্যক্তিগত প্রেম-ভালোবাসার বহির্প্রকাশ তার কবিতায়ও লক্ষ করা যায়। কিন্তু এরই মধ্যে তার একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরকেও উপেক্ষা করা যায় না।
শুরু করা যাক রোকসানার ‘ভালোবাসার সংলাপ’ দিয়ে, যে সংলাপে আছে যুবকের প্রতি ভালোবাসার অন্তর্গত নিবেদন।
আচ্ছা যুবক/মৌমাছি মৌচাকে যতো মধু জমা করে/তারচেয়ে কতো বেশি প্রেমমধু তোর বুকে জমলে বলবি, ভালোবাসি। এই প্রশ্ন তো এক চিরকালীন প্রশ্ন। এ-প্রশ্নের উত্তর কী? হয়তো যুবকেরও তা জানা নেই। কিন্তু তবু তাকে এই নিরন্তর প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে। কারণ প্রেমিকা তো পাগলি, যে পাগলি জীবনখাতায় লেখে দিবানিশি
‘বাবু! আমি তোমাকেই ভালোবাসি/কারণ! আমি তো পাগলি। (আমি তো পাগলি)
প্রেমিকার নিজস্ব স্বীকারোক্তির মধ্যেই রয়েছে তার ভালোবাসার আকুতি আর তার জন্যে তার পাগলি হয়ে হওয়ার তাৎপর্য। কিন্তু এসবেই কি সীমাবদ্ধ হয়ে আছে রোকসানা সুখীর কবিতা? তা হলে শীতের প্রকৃতি ও জনজীবন, বর্ষার ছোঁয়া, মোহনীয় শরৎÑএসব প্রাকৃতিক কবিতা কী বার্তা বহন করে? কিংবা ২৫ মার্চ কালো রাত্রি, ক্ষুধার্ত নর প্রভৃতি কবিতায় ইতিহাস ও পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের ক্ষুধার্ত নখরে ক্ষতবিক্ষত নারীর আর্তি কী যন্ত্রণার সাক্ষর রেখে যায়?
আসলে রোকসানার কবিতার বিষয় যাই হোক, তাকে কবিতা করে তোলার প্রয়াসে সে অনেকটাই সচেষ্ট। তাতে আবেগ আছে,আছে আবেগের ঘনীভূত রূপ। একইসঙ্গে আছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। এগুলো করতে গিয়ে সবসমসয় যে তার কবিতা মানোত্তীর্ণ হয়েছে, তা বলা যাবে না। তবে তার প্রয়াসের আন্তরিকতা প্রারম্ভিক একজন কবির জন্য প্রধানতম শর্ত বলে সে-শর্ত পূরণে সুখী অন্তরিক, এটাই তার কবিসত্তার ইতিবাচক দিক। রোকসানা সুখীর ভবিষ্যৎ-সফল কাব্যজীবন কামনা করি!