সুবীর পাল, কলকাতা থেকে
সে-এক রহস্যঘেরা জঙ্গল। ঝুপ করে অন্ধকার নামতেই ঝটপট আলো জ্বলে। হাজার হাজার গাছ-গাছালি পরপর নানা রঙের আলোয় জ্বলে ওঠে। সবুজ-নীল-হলুদ-গোলাপি মিলে সে-এক স্বপ্নের অনুভব। পশ্চিমঘাটের অন্যতম গভীর জঙ্গল ভীমশঙ্কর সূর্যাস্তের পর ঠিক এভাবেই আলোয় আলোয় ভরে ওঠে। মুম্বাই থেকে কয়েক ঘণ্টার পথ পেরোলেই আলেয়ামাখা ভীমশঙ্কর জঙ্গল। যেন ম্যাজিক! দিনে নানারকমের সবুজ, আর রাতে জঙ্গলের পুরোটাই রঙিন। দেখে মনে হবে, সারি সারি টুনিলাইট গাছের ডালে, পাতায় জড়ানো। কিন্তু কেন? কীভাবে? আপনাদের মনে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাওয়া স্বাভাবিক। কারণটা জানলে মনে হবে গোটা ব্যাপারটা ম্যাজিকই বটে। ভীমশঙ্কর জঙ্গলের গাছের ডালে ও পাতায় সেঁটে থাকে এক ধরনের ফাঙ্গাস, যার নাম মায়সিনা। এই বিশেষ ধরনের ফাঙ্গাস জীবন্ত থাকলেই তার কোষ থেকে নানা রঙের আলো বেরোয়। দিনের বেলায় আলো সেভাবে দেখা যায় না।
রাত হতেই ফাঙ্গাসের আলো তীব্র হয়। গোটা জঙ্গলকে অদ্ভুতভাবে আলোকিত করে। মায়সিনা আসলে বায়োলিউমিনেসেন্ট প্রজাতির ফাঙ্গাস। সাধারণত এই ধরনের ফাঙ্গাসের কোষে ফসফরাস থাকে। যার ফলে ফাঙ্গাস থেকে অনায়াসে নীল ও সবুজ আলো বেরোয়। ৫০০ থেকে ৬০০ ন্যানোমিটার তীব্রতায় জ্বলজ্বল করে ফাঙ্গাস। আর এই বিশেষ মায়সিনা ফাঙ্গাসেই ঘেরা ভীমশঙ্কর জঙ্গল। জঙ্গলের আনাচে-কানাচে থাকা মায়সিনারা অন্ধকারে তেজি হয়ে ওঠে, যা পর্যটকদের কাছে মস্ত বড় আকর্ষণ। অবশ্য, সব ঋতুতে মায়সিনা সমানভাবে সক্রিয় নয়। ভেজা মাটি বা গাছেই ফাঙ্গাসের আলোর ছটা বাড়তে শুরু করে। তাই বর্ষাকালে পশ্চিমঘাটের সিক্ত গাছে, ভেজা মাটিতে মায়সিনা যেন নতুন করে জীবন পায়। সূর্য ডুবতেই বৃষ্টিভেজা রঙিন মায়সিনারা ভীমশঙ্কর জঙ্গলকে আলোয় মুড়িয়ে রাখে। মুম্বাই থেকে ২৫০ কিমি দূরে বিশাল এই জঙ্গল। দিনে স্নিগ্ধসবুজ, আর রাতে নানা রঙের আলো জড়িয়ে থাকা।
আপনার মতামত লিখুন :