আব্দুল্লাহ আল-মামুন সিদ্দীকী : প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় বা খবরের শিরোনামে হত্যার দৃশ্য দেখা যায়। কোথাও প্রত্যক্ষভাবে কোথাও পরোক্ষভাবে। বড় ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অথবা সামান্য বিষয় নিয়ে। এটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ভাই ভাইকে হত্যা করছে। স্বামী স্ত্রীকে। সন্তান পিতাকে, মা তার সন্তানকে। আমারা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে আসলে এটা ইসলাম সমর্থন করে কি না? নিঃসন্দেহে না। বরং ইসলাম এটাকে হারাম করেছে। যেমন আল্লাহপাক বলেন “যাকে হত্যা করা হারাম করা করেছেন, তাকে তোমরা হত্যা করো না” (সুরা আনআম-১৫১)
আবার হাদীস শরীফে এসেছে “যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে হত্যা করল সে যেন সমগ্র দুনিয়ার সব কিছু ধ্বংস করল (বুখারী ও মুসলিম)
এবার আমাদের মনে হতে পারে আমিতো কাউকে হত্যা করিনি বা করবওনা তাহলে তো সমস্যা নাই। কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যাবে আমরা অনেকেই পরোক্ষভাবে হত্যার সাথে জড়িত। অর্থাৎ শারীরিক হত্যা শুধু হত্যা নয় মানসিক হত্যাও একরকম পরোক্ষ হত্যা। আমি নিজে সরাসরি কাউকে হত্যা করলাম না কিন্তু কাউকে হত্যার দিকে ঠেলে দিলাম। যেমন, স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়া করল, ফলে এটা জানার পরে তাদের কেউ একজন আত্মহত্যা করল অথবা সংসার ভেঙ্গে গেল। মনিব তার চাকরকে প্রতিনিয়ত গালাগালি করে, অপমান করে ফলে তার সহজ মনটার মৃত্যু হচ্ছে। শাশুড়ি তার পুত্রবধুকে অত্যাচার করে সুন্দর জীবন ও পরিবারকে হত্যা করছে। এগুলো হত্যা নয় কি? এছাড়া মদ ও সিগারেটের মাধ্যমে আমরা অন্যকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
এগুলো মানসিক হত্যা বা আত্মহত্যা। আল্লাহ বলেন “আর তোমরা আত্মহত্যা করোনা” (সুরা নিসা-২৯)। আত্মহত্যাকারী বা অন্যকে হত্যাকারী জাহান্নামী হবে। এখন আমরা হয়ত বলব, আমিতো মদ বা সিগারেট খাইনা বা আমি নেশাখোর নই। কিন্তু যদি আমরা মদ, সিগারেট বা নেশাদ্রব্য বিক্রেতা হই। ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যস্থতাকারী হই, তবুও আমি অন্যকে হত্যার দিকে ঠেলে দিয়ে পরোক্ষভাবে হত্যাকারী হচ্ছি।
যেমন হাদীসে ১০ প্রকার ব্যক্তির উপর লানত করা হয়েছে, যেমন: মদ বা নেসাদ্রব্য প্রস্তুতকারী, প্রস্তুতের জন্য পরামর্শদাতা, মদ বা নেশাদ্রব্য পানকারী, মদ বা নেশাদ্রব্য বহনকারী, মদ বা নেশাদ্রব্য যার নিকট বহন করা হয়, মদ বা নেশাদ্রব্য পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, মূল্য গ্রহণকারী (ক্যাশিয়ার), ব্যবসায়ী, যার জন্য মদ ক্রয় করা হয় (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ের উল্লেখযোগ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে অশ্লীল সিনেমা, নাটক, পর্ণগ্রাফী যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের সুন্দর চরিত্রেকে হত্যা করছি। বিভিন্ন অনৈসলামিক সিরিয়াল বা চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের মা-বোনেরা পর্দাহীন ও লজ্জাহীন হয়ে নিজেদের চরিত্রকে হত্যা করছে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবারে। ছোট ছোট বাচ্চারাও এসবের মাধ্যমে সত্যের আলো থেকে দূরে অন্ধকার কুপে পতিত হচ্ছে। এসবই চরিত্রকে হত্যার শামিল। অথচ রাসুল (স:) বলেছেন “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যার চরিত্র উত্তম” (আল হাদীস)
সুতরাং আমাদের সকলের উচিৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হত্যাকান্ড থেকে বেচে থাকা ও সমাজ থেকে হত্যাযজ্ঞ দূর করতে এ বিষয়ে সচেতন থাকা এবং করা। আল্লাহ তায়ালা তাওফীক দান করুন, আমীন।