জুলফিয়া ইসলাম : জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে আবেগের প্রয়োজন আছে। তবে এর গঠনমূলক ও ধ্বংসাত্মক দিক আছে। জন্মের সময়ই শিশু আবেগ অর্জন করে থাকে। তবে সেটা পরিণত হয় উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষা আসবে জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে। প্রকৃতির সর্বত্রই জ্ঞান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে জ্ঞানচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় বাহনটির নাম হচ্ছে বই। বই পড়ে অনেক অজানাকে জানা ও অদেখাকে দেখা সম্ভব। একমাত্র বইয়ের মাধ্যমেই সমাজের বঞ্চিত শ্রেণিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গল্প পরিসরে প্রবেশ করানো সম্ভব। কারণ পাঠ্য বইয়ে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয়ের বাইরে কিছু শিখতে পারে না। অভিভাবকের উচিত ছেলেবেলা থেকেই তার সন্তানকে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তোলা। শিশু বয়স থেকে জ্ঞানচর্চায় উপযোগী হয়ে উঠলে পরবর্তীকালে শিশুটি হবে জাতির উপযুক্ত ভবিষ্যৎ বংশধর। শিশু পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিভাবকের স্মরণ রাখা উচিত তারা যেন তাদের অজান্তে সব দোষ-ত্রুটি তাদের সন্তানের উপর চাপিয়ে না দেন। উচ্চ আদর্শিক পিতামাতার এটি একটি নেতিবাচক ধারণা। চাপিয়ে দেয়া আদর্শিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে তাকে বুঝতে সহায়তা করা। কিছু সাধারণ নিয়ম বেঁধে দিলেই কিংবা কিছু উপদেশ দিলেই মানুষের জীবন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আবেগের উৎকর্ষ সাধন আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি।
আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীলতা ও সামাজিক বোধ সম্পন্ন মানুষের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। একই মায়ের সব সন্তানের বোধশক্তি সমান হবে এরকমটি ভাবার কোনো কারণ নেই। আপনার অবোধ শিশুটিকে ভালোবাসা দিয়ে তৈরি করে নেয়া সম্ভব। তাকে তার দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন করে দিন। তার কাজে সব সময় সাহায্য না করে সহযোগী হোন। আত্মনির্ভরশীল হলেই একজন মানুষ তার শিশুসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে শেখে। আত্মকেন্দ্রিক মানুষ উপরতলারই হোন কিংবা বঞ্চিত শ্রেণির হোন তার মধ্যে সামাজিকতা বোধ থাকে না। এজন্য প্রয়োজন সুকুমার বৃত্তি গড়ে তুলে ভয় পরিত্যাগ করতে শেখানো। এটি শুরু হবে একটি পরিবার থেকে। পরিবারের মমতাময়ী মাকে এসব বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যে সন্তান স্বাবলম্বী শুধু তার প্রশংসাই করবেন না। সব সন্তানকেই সমান দৃষ্টিতেতো দেখতে হবে। সে যখন সুযোগ পাবে যেকোনো কাজে সে সাহসিকতা প্রকাশ করবে। নির্ভরতা কমিয়ে আস্থাশীল হবে। ভালো-মন্দর বিচারবোধ জন্মাবে। পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা শিখবে। যার মানসিক ক্ষমতা যতো উন্নত পর্যায়ে যাবে তার মনোযোগের পরিধি ততোই সম্প্রসারিত হবে, দূরদর্শিতা বাড়বে। নিজেকে সমাজের একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে শিখবে।
এসব কর্তব্য রয়েছে পরিবার, সমাজ ও সর্বোপরি রাষ্ট্রের। এভাবেই একটি সমাজের সফলতা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :