রফিক আহমেদ: ‘শ্রমজীবী ও শিল্প রক্ষা আন্দোলন’ এর আহ্বায়ক বর্ষীয়ান শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান বলেছেন, শ্রমিকের অধিকার হরণ বন্ধে সরকারকে বাধ্য করতে হবে দেশের আশিভাগ শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতা ও শোষণমুক্তির জন্য সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ট্র্রেড ইউনিয়নসমূহের জাতীয় মঞ্চ ‘শ্রমজীবী ও শিল্প রক্ষা আন্দোলন’ এর উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।
বর্ষীয়ান শ্রমিকনেতা বলেন, দেশের আশিভাগ শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতা ও শোষণমুক্তির জন্য সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। কিন্তু গত ৪৭ বছরে দেশে এক শ্রেণির মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলেও শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের বদল হয়নি। কতিপয় লুটেরা গোষ্ঠীর ফুলে ফেপে ওঠার বলি হয়েছে এদেশের মেহনতি মানুষ। সরকার লুটেরা মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রমিকদের বিদ্যমান অধিকারগুলো একের পর এক হরণ করছে। এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ‘শ্রমজীবী ও শিল্প রক্ষা আন্দোলন’ গঠিত হয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমরা আন্দোলন করে শ্রমিকের অধিকার হরণ বন্ধে সরকারকে বাধ্য করবো। তিনি সকল ট্রেড ইউনিয়নসমূহের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহŸান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমজীবী ও মেহনতি জনগণ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেশীয় শিল্প, কৃষি, সার্ভিস সেক্টর ও অর্থনীতি আজ নানা সঙ্কটে। এই সঙ্কট মোকাবেলায় শ্রমিক আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করলেই নেমে আসে দমন-পীড়ন। বাংলাদেশের শ্রমিক নেতৃত্বের অধিকাংশই আজ আপোষমুখি ও ধনিক শ্রেণির পকেটস্থ। স্বত:স্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন আজ সুবিধাবাদীদের নেতৃত্বে দিশেহারা। দেশের শ্রম আইন যাকে কালাকানুন বলা হয় সেখানেও শ্রমিকদের যেসব অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলি থেকেও শ্রমিকরা বঞ্চিত। ৮ ঘণ্টা কাজ, বিশ্রাম, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি, চাকুরির নিরাপত্তা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা নেই। দেশের সরকারি কর্মচারীরা দুই ঈদে বোনাস পেলেও শ্রমিকরা অধিকাংশই তা থেকে বঞ্চিত। আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়নেরও কোনো উদ্যোগ নেই। গ্রাম গঞ্জের শ্রমিকরা বাঁচার মত ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের সংগঠিত অসংগঠিত, শহর গ্রামের শ্রমিক, সার্ভিস সেক্টরের শ্রমিক, পেশাজীবী এবং কৃষি শ্রমিকদের জরুরি দাবি সম্বালিত একটি জাতীয় দাবিনামা নিয়ে আন্দোলন অগ্রসর করতে হবে।
তিনি সমাবেশে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল, শ্রমিক স্বার্থে আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ১৬ হাজার টাকা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ এবং গণতন্ত্র কায়েমের দাবি জানান। একইসাথে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে দেয়ার চক্রান্ত বন্ধ করে মজুরি বোর্ড প্রস্তাবিত মজুরি হার বাতিল এবং ১৬ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানান। সমাবেশে গ্রামীণফোনে চলমান কর্মী ছাটাই প্রকল্প সিডিসি আবিলম্বে বাতিল এবং সার্ভিস সেক্টরের কর্মীদের চাকুরির নিশ্চয়তা বিধানের দাবিও জানান। বক্তারা মন্ত্রীসভায় গৃহীত শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী সংশোধনী জাতীয় সংসদে অনুমোদন না করার আহ্বান জানান।
শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য আরো রাখেন- আন্দোলনের সদস্য সচিব হারুনার রশীদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোসাদেক হোসেন স্বপন, সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেম হোসেন, বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাদল খান, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএএম ফয়েজ, বাংলাদেশের সূতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মছিউদ্দৌলা, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, জেনারেল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন গ্রামীনফোন এর সভাপতি আহমদ মঞ্জুরুদ্দৌলা, ভ‚মিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি মাহাতাব উদ্দীন শহীদ, পরিবহন শ্রমিকনেতা হযরত আলী, হকারনেতা আবুল হাশেম কবির ও মৎস্যজীবী নেতা আনোয়ার হোসেন শিকদার, বস্তিবাসীনেতা কুলসুম বেগম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মঞ্জুর মঈন ও বজলুর রহমান বাবলু ।