রোবায়েত ফেরদৌস : মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর কার্যকর হওয়া ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে আলোচনা চলমান। পক্ষে-বিপক্ষে নানা তথ্য-বক্তব্য আসছে। সবাই বলছেন বটে, কিন্তু নির্মোহ হচ্ছে কী বিশ্লেষণগুলো? সাংবাদিকতার একজন ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি আইনটি ভালো হয়নি। এটি একটি কালো আইন হয়েছে। আইনটি করা কী সঠিক হয়েছে? সঠিক হয়নি, ভুল করেছে সরকার। কারণ এই আইন অবাধ তথ্য-প্রবাহকে নষ্ট করবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অনেকখানি ব্যাহত করবে। ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ হয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও অপব্যবহার হবে। আমি এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। আর এর প্রধান শিকার হবে সাংবাদিক সমাজ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ডিফেন্স করতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা যারা করেন তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে নির্ধারণ হবে সৎ-অসৎ সাংবাদিকতার সংজ্ঞা? কোনটা সৎ, কোন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সরকার তার সুবিধামতো ব্যাখ্যা করবে। সরকারের পক্ষে গেলে সৎ-বস্তুনিষ্ঠ, বিপক্ষে গেলে অসৎ ও বিকৃত সংবাদ হবে।
ফলে এখানে অস্বচ্ছতা রয়েই গেছে। এই আইনে পুলিশকে সীমাহীন স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা জামিন অযোগ্য। এটা কীভাবে আমাদের জন্য স্বস্তির হতে পারে? আমি বুঝি না। পুলিশ তো এমনিতেই মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে। আর এরকম সীমাহীন ক্ষমতা পাওয়ার পরও পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না, কীভাবে বিশ্বাস করবো? আমার মনে হয়, এ নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ ও সংগ্রাম চলমান রাখতে হবে। কেননা এই কালো আইনটিকে আমরা মেনে নিতে পারি না। সংবাদপত্রের বিকাশ, স্বাধীন গণমাধ্যম, মুক্ত সাংবাদিকতা বা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি কিন্তু এই আইনটি তো ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে বাধা হিসেবে কাজ করবে। এটা কি উপলব্ধি করেন সংশ্লিষ্টরা?
এ ভূখণ্ড থেকে বৃটিশরা চলে গেছে সেই কবে। পাকিস্তানি শাসকেরাও টিকতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ বছর পার হতে চললো কিন্তু সত্যিকার অর্থে এখনো আমরা গণতান্ত্রিক হতে পারিনি। আমরা এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারিনি। তা না হলে এরকম একটি কালো আইন এখানে পাস হতে পারতো না।
আইনটি নিয়ে সম্পাদক পরিষদ, নাগরিক-সাংবাদিক সমাজ, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ সবার মত বা চিন্তাকে তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে পাস হলো আইনটি। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নও অনেকখানি বাধাগ্রস্ত হবে।
পরিচিতি : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাবি.