ইমতিয়াজ মাহমুদ : ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নামে যে আইনটা পাশ হয়েছে এটা একটা মন্দ আইন হয়েছে। বন্ধুরা, আপনারা আইনটা দেখেন, এইটা সম্পর্কে অন্যদের মতামত খোলা মন নিয়ে শোনেন। বিবেচনা করেন। চিন্তা করেন এবং নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেন যে এই আইনটা ভাল হয়েছে কি মন্দ হয়েছে, এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল কি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বুদ্ধি চিন্তা সৃজনশীলতা এইসবকে এই ধরনের আইন কতোটুকু প্রভাবিত করবে। ভাবুন।
আমার সবিনয় মতামত তো আপনাদেরকে বললামই। আইনটা ভাল হয়নি। কেন আমার এই মতামত সেও সম্ভবত আপনারা জানেন। আমি তো কেবল লিবার্টি লিবার্টি করে চীৎকার করি। এই আইনটা সম্পর্কে লিবার্টিই আমার আপত্তির ভিত্তি। আইন করে হোক বা অন্য যে কোনোভাবেই হোক, কণ্ঠ রোধ করা যায় না। কণ্ঠ রোধ করা অন্যায়। নৈতিকভাবে তো এটা অন্যায়ই, আইনগতভাবেও এইরকম কণ্ঠ রোধ করা কাজ বা আইন সেসব অবৈধ। আইন আর নৈতিকতা ছাড়াও, প্রতিদিনকার জীবনেও মানুষের কণ্ঠ রোধ করা রাষ্ট্র সমাজ বা ব্যক্তি কারো জন্যেই ভালো না।
এই কথাটা, যে মানুষের কণ্ঠ রোধ করা আমাদের কারো জন্যেই ভালো ফল বয়ে আনবে না, এটার উদাহরণ দিয়ে খোলাসা করে বলা দরকার ছিল। ইচ্ছে করছে না। আপনারা মেহেরবানী করে একটু চিন্তা করেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করেন। তর্ক করেন। এটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রশ্ন না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির ক্যারেক্টারের প্রশ্ন। সুতরাং সকলেই চিন্তা করা জরুরী। আবার এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নাই। আজকে এই আইন হয়েছে বলে যে চিরস্থায়ী মহাসর্বনাশ হয়ে গেছে সেটাও না। আপনি আমি না চাইলে সরকার এই আইন তুলে দিতে বাধ্য হবে। একটু পরিশ্রম বাড়ল আরকি।
কয়েকটা কথা মনে রাখবেন। লিবার্টি ব্যাপারটা কন্টেন্ট নিরপেক্ষ। অর্থাৎ বাকস্বাধীনতা একটি বিষয় নিরপেক্ষ ব্যাপার। মানে হচ্ছে বক্তব্যের বিষয় বিবেচনা করে বক্তব্যটি প্রকাশের স্বাধীনতা নির্ধারণ করা হয় না। বাকস্বাধীনতা একটি নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের অধিকার আছে সীমিত কয়েকটি ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে এইরকম আইন তৈরি করা। আবার বলি। বাকস্বাধীনতা একটি নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি অপরের হার্ম করছেন, আপনি যা ইচ্ছা তা বলতে পারেন। রাষ্ট্র্রে কেবল অধিকার আছে সীমিত কয়েকটি ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে আইন করা। স্বাধীনতাটা অসীম- সীমাবদ্ধতা বা শর্তগুলি হচ্ছে রাষ্ট্রের উপর, স্বাধীনতার উপর নয়। এটাই আমাদের দেশের সংবিধানের বিধান।
তরুণ বন্ধুদের জন্যে একটা সতর্কবার্তাও এখানে দিয়ে রাখি। আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকজন, এমনকি আমরা প-িত বা বিজ্ঞ মনে করি এরকম অনেকেও, বলেন কিনা বাকস্বাধীনতা স্বাধীনতা নাকি শর্তযুক্ত। ওরা ভুল বলে। এরকম কথা যে বলে তাকে উপেক্ষা করেন। সে যেই হোক। সে প্রফেসর হোক, উকিল জজ বা লেখক সাংবাদিক। ভুল কথা। ইগনোর করবেন ওদেরকে। ফেসবুক থেকে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান