মাহমুদুল হক জালীস: পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত রহমত রয়েছে। যার ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য করেছেন। দৈনন্দিনের উপকারার্থে করেছেন। সহজ জীবন চলাচলের জন্য করেছেন। মানুষের অন্নবস্ত্র থেকে শুরু করে প্রায় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার অপার নেয়ামত পরিলক্ষিত হয়। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমেও আল্লাহ তাআলা বান্দার কল্যাণ এবং রিজিকের ব্যবস্থা করেন। বৃষ্টি বর্ষণের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
প্রাকৃতিক জীবনে দেখা যায় কয়েকদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষিত হলেই মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাষায় আপত্তিকর মন্তব্য করে বসে। কিন্তু কুরআনের বর্ণনায় বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেমন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তেমনি মানুষের কল্যাণেই বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন।
বৃষ্টি বর্ষণের বিষয়ে প্রিয়নবি সা. বলেছেন, ‘আমার বান্দারা যদি আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম আর সকাল বেলায় সূর্য (আলো) দিতাম এবং কখনও তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ) আবার দেখা যায়, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আকাশে মেঘ ও বিদ্যুৎ চমকানো দেখলে এবং গর্জন শুনলে পেরেশান হয়ে যেতেন। মেঘের গর্জনের সময় তিনি কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন। মেঘের ভয়াবহতা থেকে হেফাজত থাকতে তাসবিহ এবং দোয়া পাঠ করতেন।
বৃষ্টি বর্ষণ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা অনেক আয়াত অবর্তীণ করেছেন, যেমন তিনি ইরশাদ করেন ‘আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও পাতাঘন উদ্যান।’(সুরা নাবা : আয়াত ১৪-১৬) ‘আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যে এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক। এবং ঐ বৃক্ষ সৃষ্টি করেছি, যা সিনাই পর্বতে জন্মায় এবং আহারকারীদের জন্যে তৈল ও ব্যঞ্জন উৎপন্ন করে।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১৮-২০) ‘তিনিই স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে পানি বর্ষণ করি। তা দ্বারা মৃত ভূভাগকে সঞ্জীবিত করার জন্যে এবং আমার সৃষ্ট জীবজন্তু ও অনেক মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে। এবং আমি তা তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতরণ করি, যাতে তারা স্মরণ করে। কিন্তু অধিকাংশ লোক অকৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই করে না। (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৮-৫০) ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোম-ল ও ভুম-ল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিজিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩২)
‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।’ (সুরা আনআ’ম : আয়াত ৯৯)