শাহানুজ্জামান টিটু, গাজীপুর থেকে ফিরে : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের আর বাকি দুই দিন। ২৬জুন নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব মুখর পরিবেশে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়ায়ের ইঙ্গিত দিলেন ভোটাররা। তবে ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে যেন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে আবার বাড়িতে ফিরতে পারেন সেই নিশ্চয়তা চান তারা।
গাজীপুর চোরাগ আলী এলাকা ও টঙ্গির এরশাদ নগর এলাকার কয়েকজন ভোটার জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ব্যাক্তিগত লোক ভালো তিনিও ভোটার মধ্যে তার অবস্থান ইতিমধ্যে তুলে ধরতে পেরেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকেও তারা কাছের মানুষ হিসেবে জানেন। দল এবং প্রার্থীর ব্যাক্তি ইমেজ এই দুটি মিলিয়েই গাজীপুরবাসী ভোট দেবেন। এসব ভোটারদের ধারণা দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা বেশী। তাই এবার নির্বাচন জয় পরাজয়ের ব্যবধানও হবে কম ভোটের।
প্রার্থীরা ইতিমধ্যে নির্বাচিত হলে গাজীপুরে তাদের কর্মকান্ড কী হবে তা প্রকাশ করেছেন। এরপাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে। এবং তিনি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখবেন।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার জনগণ তাকে নির্বাচিত করলে এলাকার কী ধরণের কর্মকান্ড করবেন তা ভোটারদের মধ্যে তুলে ধরছেন। এছাড়া তার নির্বাচনী প্রচারণার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিথ্যায় মামলায় কারাবন্দি করে রাখা বিষয়টি।
এরশাদ নগরে ইজিবাইক চালক কেরামত আলি জানান, তারা নিবিঘ্নে ভোট দেওয়ার প্রত্যাশা করেছেন। বলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীর অবস্থান এখন ফিফটি-ফিফটি। কোন দলের প্রার্থী এখানে জিতবে এই মুর্হুতে তার পক্ষে বলা সম্ভব না। চেরাগ আলী এলাকার রিকসা চালক বলেন, এখানে লড়াই হবে। এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
রোববার দিবাগত রাত বারোটার পর থেকে সব ধরণের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো চষে বেড়াচ্ছেন, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন নিজের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। বসে নেই দুই প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকমীরা। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন তারাও। চাচ্ছেন নৌকা ও ধানের শীষের পক্ষে ভোট। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট পথ সভা করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি এই প্রচার প্রচারনায় কোনো বাধা হয়নি। ছাতা মাথায় দিয়ে উভয়দলের কর্মীরা এবাড়ি থেকে ও বাড়ি, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাচ্ছেন ভোট চাইতে। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এই প্রচারনা আরো বেড়ে যায়। কারণ প্রচার প্রচারণার সময়ও হাতে কম।
প্রচারণায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, পেশাজীবী ও মহিলা দলের নেতকর্মীরা সকালে গাজীপুর যান। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসব নেতারা গাজীপুর সদর, ৪৯, ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোতাফিজুর রহমান ইরান,বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
দুুপুরের পরে বিএনপির সহ সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খানের নেতৃত্বে টঙ্গী এরশাদনগর বাজারে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় সংক্ষিপ্ত পথ সভা অনুষ্ঠিত। পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মীর রবিউল ইসলাম, সাপ্তাহিক জয়যাত্রার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, সাংবাদিক জাকির হোসেন, দেওয়ান মনিরুজ্জামান মানিক, কবি রফিক লিটন প্রমুখ।
অন্যদিকে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের মহিলাদলের একটি দল গাজীপুর সদর, ৪৯, ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওর্য়াডে ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনীয় প্রচারণায় অংশ নেন।
চেরাগ আলী বাজার এলাকায় সংক্ষিপ্ত পথ সভায় বক্তব্য দেন, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক আমেনা বেগম, মেহেরুন নেছা হক, রোকেয়া সুলতানা, তামান্না, রাবেয়া আলম, সাবিনা ইয়াসমীন, খন্দকার আতিকা, কাজি সেলিমা, নাজনীন মাহমুদ, মুকুল আকতার , ইসরাত জাহান পান্না প্রমুখ।