মোস্তফা কামাল গাজী: পবিত্র রমজান বিদায়ের পর এলো মহামান্বিত শাওয়াল মাস। মুমিন বান্দার নিকট এ মাসের গুরুত্বও অপরিসীম। রমজানের পর মানুষ যেনো রোজার কথা ভুলে গিয়ে উদাসীন না হয়ে যায়, এজন্য আল্লাহ তায়ালা এ মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা দান করেছেন। রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের এ ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব। হাদিসে এ রোজার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলে আকরাম (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণকেও রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যারা মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে, তারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে।' (মুসলিম শরিফ: ১/৩৬৯) এ রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ বলেন, ‘যারা পবিত্র রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের আরো ছয়টি রোজা রাখবে, তারা সেই ব্যক্তির মত হয়ে যাবে যে ব্যক্তি সদ্য তার মায়ের পেঠ থেকে দুনিয়াতে আগমণ করেছে।' (তিরমিজি: ৪৩৪৫)
অর্থাৎ সে শিশু যেমন পুত-পবিত্র ও নিষ্পাপ, তার কোন গোনাহ নেই; যারা শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারাও সেই নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যাবে। হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)কে জিজ্ঞাসা করলাম, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারবো?' তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজান পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো। তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়া পাবে।’ (তিরমিজি শরিফ: ১৫৭৩)
এ হাদিসে বলা হয়েছে যে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এই সওয়াব এভাবে হবে, মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের সুরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘যে একটি নেক কাজ আঞ্জাম দিবে সে দশগুণ বেশি সওয়াব পাবে।’ সে হিসেবে রমজানের ত্রিশ রোজায় তিনশত রোজার সওয়াব হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজায় ষাট রোজার সওয়াব হয়। সুতরাং রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬ টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
শাওয়ালের রোজা রাখার নিয়ম: শাওয়ালের ছয় রোজা শাওয়াল মাসেই শুরু করে শেষ করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে ছয় দিনে ছয় রোজা রাখলেও হবে আবার মাঝে ফাঁকা রেখে পৃথকভাবেও রাখা যাবে। উল্লেখ্য যে, শাওয়ালের ছয় রোজার সওয়াব কেবল তারাই পাবে, যারা রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালন করেছে। কারণ রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ আর শাওয়ালের রোজা মুস্তাহাব। আর মুস্তাহাবের সওয়াব তখনই পাওয়া যায় যখন ফরজ যথাযথভাবে পালন করা হয়। অনেককে দেখা যায়, রমজানের রোজা ঠিকমতো পালন না করে শাওয়ালের ছয় রোজার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। এটা মোটেই উচিৎ নয়।
শাওয়ালের এ ছয়টি রোজা নিয়ে আমাদের সমাজে ভ্রান্ত কিছু ধারণা ও কুসংস্কার দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করে, এ ছয় রোজা শুধু মহিলারা রাখবে; বুড়ো ও পুরুষলোক রাখবে না। আবার কেউ কেউ মনে করে, এ রোজা একবার রাখলে প্রতি বছরই রাখতে হবে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু কুসংস্কার সমাজে দেখা যায়। বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামি শরিয়তে এহেন কোন বিধান আরোপ করেনি। এসব কিছুই কুসংস্কার ও কুপ্রথা তথা ভ্রান্ত বিশ্বাস। শাওয়ালের রোজা পুরুষ, মহিলা, যুবক, বৃদ্ধসহ সকলেই রাখতে পারবে। আবার একবছর রেখে অন্যবছর না রাখলেও চলবে।