ইউসুফ আহমেদ তুহিন : বাংলাদেশে জার্মান তরুণীর ল্যাপটপের ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি রীতিমতো জাতীয় ইস্যুর রূপ নিয়েছে। জার্মানিতে এমনই এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশের তরুণের সঙ্গে। সেই তরুণটিই ছিলাম আমি। তবে আমার জন্য জার্মান ‘বাংলাদেশ’ হয়ে ওঠেনি।
যারা জার্মান তরুণীর ছিনতাইয়ের ঘটনায় চোখের পানি ফেলছেন, তাদের বলছি: জার্মান তরুণী স্যোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লিখেছেন বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নয়! তার নিজের দেশের অবস্থা তো তার চেয়ে খারাপ। ২০১৩ সালের মার্চে জার্মানের হেনওভারে যাই সিভিট ফেয়ারে। মার্চের ৫ তারিখে জার্মান পৌঁছেই ছিনতাইয়ের স্বীকার হই। আমার কাছে থাকা ৪ হাজার ইউরো, ১০০০ ডলার, ক্রেডিট কার্ড, ৫০০ ডলারের প্রি-পেইড গিফট কার্ড, ট্রেনের টিকেটসহ আমার প্রয়োজনীয় সবকিছুই ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। যা টাকায় হিসেব করলে ৫ লাখ টাকার বেশি হবে। আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় আমার হাতে ছুরি মারে। আমি ছিনতাইকারীদের ছবি তুলে রাখি। পরে অনেকের কাছে সাহায্য চেয়ে না পেলেও এক সাইকেল আরোহী জার্মান ছেলে আমাকে পুলিশ স্টেশনের বাইরে রেখে দ্রুত চলে যায়।
পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু, পুলিশ ইংরেজি জানে না। অামিও জার্মান ভাষা জানি না। পরে দোভাষী এক ভারতীয় আসেন। তিনি ইংরেজি জানেন। তার সাহায্যে মামলা রেকর্ড করি। মামলার সঙ্গে আমি ছিনতাইকারীদের ছবিও আমার ক্যামেরা থেকে দিই। ছবি মোটামুটি স্পষ্ট ছিল, এরপরও তারা কিছুই করতে পারেনি। আমার কাছে পরের দিনের খাওয়ার জন্য এক টাকাও ছিল না। পরেরদিন মেলা গ্রাউন্ডে গিয়ে সবাইকে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানাই। আমার পরিচিত উত্তম দাদার থেকে ৫০ ইউরো ধার করে সকালের নাস্তা করি। দেশ থেকে জরুরিভাবে টাকা নেওয়াই। টিকিট পরিবর্তন করিয়ে আমার জার্মান সফর সংক্ষিপ্ত করি।
ইপিবির তৎকালীন চেয়ারম্যান (নাম মনে নেই, কিন্তু ওনার দাড়ি ছিল এবং খুবই ভাল মানুষ ছিলেন।) পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ওনাকেও পাত্তা দেয়নি। ছবি থাকা সত্ত্বেও ছিনতাইকরীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। ছিনতাই হয়েছিল সন্ধায়। আমার কাছে পুলিশ জানতে চেয়েছিল এতো টাকা সঙ্গে কেন রেখেছি। আমি বলেছিলাম, আমি আজই এসেছি। আর আমি জানতাম জার্মান নিরাপদ দেশ। তারা বলল, কে বলেছে? জার্মান ক্রাইম জোন। দেশে ফিরে আমি জার্মান এম্বেসীতে মামলার কাগজ নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা কোনভাবে সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল।
সেই জার্মান এক তরুণীর ল্যাপটপ টানা পার্টি নিয়ে গেছে। ওদের দেশের পুলিশের মতো আমাদের পুলিশ হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে ইতোমধ্যে যে গাড়ি থেকে ছিনতাই হয়েছে সেই গাড়ির নাম্বার বের করে ফেলেছে। আসামিও হয়তো ধরা পড়বে। কিন্তু, আমার ক্ষেত্রে তার কোনটিই হয়নি। আমিও তখন (২০১৩ সালের মার্চের ৬ তারিখে) আমার ফেইসবুকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ইংরেজিতেই দিয়েছিলাম। কোন জার্মান পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেনি। আর বাংলাদেশে জার্মান তরুণীর ছিনতাইয়ের ঘটনাকে জাতীয় ইস্যু করে ফেলেছে পত্রিকাগুলো। আমাদের বিদেশিদের প্রতি এই দাসসুলভ অনুগত্য কবে শেষ হবে? সূত্র : নতুন সময়
লেখক: সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :