শিরোনাম
◈ সরকারি দপ্তরগুলোতে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরে কড়াকড়ি: কৃচ্ছ্রনীতির অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ◈ ২১ বছর বয়স হলেই স্টার্ট-আপ লোনের সুযোগ, সুদ মাত্র ৪%: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা ◈ ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে: আশিক চৌধুরী ◈ তিন বোর্ডে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ◈ এসএসসির ফল নিয়ে যে বার্তা দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ সৈক‌তের কা‌ছে দু:খ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন ‌বি‌সি‌বির প্রধান নির্বাচক  ◈ ভারত সরকারকে আম উপহার পাঠাল বাংলাদেশ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১৬ কর্মকর্তা বদলি ◈ কল রেকর্ড ট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি, অপেক্ষায় থাকুন: তাজুল ইসলাম ◈ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০১৮, ০৪:২৮ সকাল
আপডেট : ৩১ মে, ২০১৮, ০৪:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা সত্তা জিয়াউর রহমান

শওকত মাহমুদ : বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক ক্ষণজন্মা সত্ত্বা হচ্ছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের প্রথম জননির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তার সৃষ্টিশীল-নেতৃত্ব, দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তা, জনসাধারণকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করার পদক্ষেপ এবং নিজের প্রশ্নাতীত সততা তাকে একযোগে তার সমসাময়িক কালের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করে।

শহীদ জিয়ার জীবনাবসান ৩০ মে ১৯৮১-এ। দেহে মনে যেমন সুস্থ্য, সজীব, দেশপ্রাণ ও চিরায়ত স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, তাতে তার শতায়ুই চেয়েছিল তৃতীয় বিশ্বের মজলুম মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির বেড়ে ওঠা এবং গরীব দুনিয়ার স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জিয়ার আয়ু সম্পর্কিত হয়ে ওঠায় তাকে চক্রান্তের শিকার হতে হয়। আমাদের জন্য কী রেখে গেছেন, সে হিসাব অসম্ভব কাজ, জীবন স্মৃতির আয়নায় পুরোটা আসে না।

মনের দেউড়িতে বসে শহীদ জিয়াকে বারবার স্মরণ করার, পিছু হটে যাওয়া সেই সময়ের চেহারা দেখার লোভ ভেতরভাগে সব সময় বয়ে চলে। সময়ের ওই আদলটাকে মুঠো ভরে ধরতে কী শান্তি! কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে- “জানালাটা খুলে দাও, আলোরা বসুক বিছানায়। আলোরা শুনিয়ে যাক ভুলে যাওয়া আরব্য রজনী। কত কি যে ভুলে গেছি, ভুলে গেছি এবাদুর গীতি ও নীল ভোরের আলো, আজ একটু আজান শোনাও।”

এই যে কথাগুলো বললাম, এরই একত্র সন্নিবেশের মধ্যদিয়ে জীবনকালে জিয়াউর রহমান একজন সামরিক অধিকর্তার সত্ত্বা থেকে নিজের উত্তরণ ঘটান একজন রাষ্ট্র নেতায়। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র-রাজনীতির অঙ্গনে তার পদচারণার আগের সময়টি ছিল সর্ব অর্থে অন্ধকার। তাকে নিজের সময়টিকে পূর্ব সময় থেকে পৃথক করতে হয়েছে। এই কাজটি তিনি করেছেন দেশবাসীর দৃষ্টির সম্মুখে থেকে। সময়ের এবং ব্যক্তির, গত জমানার এবং নতুন নেতৃত্বের পরিচালনায় রাষ্ট্রের আলাদা বৈশিষ্ট্য দেশবাসী সহজে অনুধাবন করতে পেরেছে। সংক্ষেপে বলিঃ ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুল অঙ্গনের বিগত সময় এবং নতুন সময়ের পার্থক্য নির্মাণ, রাজনীতি-নিরপেক্ষতার চারিত্র্য নির্মাণ, কৃষিকে গতিশীলতা উৎপাদনশীলতায় জাগিয়ে তোলা এবং এতে ব্যাংক ঋণ সংশ্লিষ্টতার মধ্যদিয়ে কৃষি পুঁজির বিকাশ সাধন, শিল্প খাতকে উদ্যমশীল করে একে বহুধা বিকশিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ, গার্মেন্টস নামে সম্পূর্ণ নতুন খাতের সংযোজন ঘটিয়ে শিল্প পুঁজির বিকাশে চেষ্টা, দেশের কৃষি ও পল্লী খাতের বিপুল অলস-অদক্ষ জনশ্রেণীর জন্য বিদেশের শ্রম বাজারের সন্ধান দান,

তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান, ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টারকানেক্টার স্থাপনের মধ্যদিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া, বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরকে বসবাস উপযোগী করে বাংলাদেশকে বড় করা, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি করা, সমুদ্র উপকূলের জমিতে লোনা পানির চিংড়ি চাষ- এই সবকিছুতেই শহীদ জিয়া পথ দেখান একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শুধু নয়, একজন অগ্রণী দেশকর্মী হিসেবেও। স্বাধীন দেশ, তার বর্ধিত লোকসংখ্যা, বর্ধিত চাহিদা ইত্যাদি হিসেবে নিয়েই জিয়া নতুন নতুন পথ উন্মোচনে সচেষ্ট হন। পাশ্চাত্যের আরোপিত কলঙ্ক অভিধা ‘বটমলেস বাস্কেট বা তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে দেশকে স্বনির্ভরতায় বিকশিত করতে হবে- এই চেতনাও তিনি ছড়িয়ে দেন দেশবাসীর মাঝে। চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য সুযোগের দুয়ার উন্মুক্ত করা, সংস্কার ভেঙ্গে ফেলতে পুলিশে-আনসারে মেয়েদের চাকরি দেয়া- এসব কাজ শুরু হয় শহীদ জিয়ার সময়।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে তার নিজস্ব সত্ত্বায় জাগিয়ে তুলে পথ চলার চেতনা নির্মাণে শহীদ জিয়া বলেছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কথা। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি অখ- নিবেদনের প্রমাণ রেখে গেছেন তিনি। সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মতের প্রতি ছিলেন সহনশীল। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নামক আজকের লাগসই চলতি শব্দটি ব্যবহার না করে বলব, বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য, এর কর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসেরও প্রমাণ রেখে গেছেন তিনি।

জৈববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি মিলেই মানুষ। শরীরে টেকা আর বাড়া আর তার ভোগের জন্য ব্যবস্থা করা। সবাইকে দাবড়ে, কেড়ে খেয়ে, একলা ফেঁপে ওঠার নেশা। বিপরীত সত্যটি হচ্ছে মানুষ মনোময়। মন বলতে কেবল হৃদয়বৃত্তি নয়, তার সঙ্গে জুড়ে আছে তার বুদ্ধি এবং মর্যাদাবোধের চেতনা। রাজনীতিও তাই। ভোগের এবং ত্যাগের। জিয়াউর রহমান জাতির যখন বারবার ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ভোগ শব্দটিকে তার ব্যক্তিগত অভিধান থেকে তুলে দিয়েছিলেন বলে তার সময়টা নিয়ে ভাবতে বুকে কী অসীম গৌরব জাগে বলে শেষ করা যাবে না। সেজন্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক থেকে বাংলাদেশের সফল নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক হতে পেরেছিলেন। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ পম্পিডু রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিকের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে বলেছেন- একজন রাষ্ট্রনায়ক হচ্ছেন রাজনীতিবিদ।

যিনি নিজেকে জাতির সেবায় উৎসর্গ করেন আর একজন রাজনীতিক রাষ্ট্রনায়ক হতে গিয়ে জাতিকে তার সেবায় নিযুক্ত করেন। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের যে অহমবোধ তাকে বাঁচাতে বিদেশীদের বিরুদ্ধে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ, ১৮৫৭ তে বাঙালি মুসলমান সৈন্য অধ্যুষিত বেঙ্গল ল্যান্সার্স ইউনিটের সিপাহী বিদ্রোহ, ৬৫’র খেমকারানে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীরত্বপূর্ণ লড়াই এবং ৭১’এ চুড়ান্ত স্বাধীনতার মরণপণ সংগ্রাম- এ সবের নানা ওঠা-পড়া, নানা এগোনো-পিছানোর মাঝ দিয়ে উতরে আসার ধারাপাতই আমাদের ইতিহাস। আর তার মধ্যমণি শহীদ জিয়া। ৭১ এর অনিশ্চিত-অনির্দেশ্য সময়ে দেশবাসীর কানে বেজেছিল তার কণ্ঠস্বর, স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা নিয়ে- আমি মেজর জিয়া বলছি। আর কেউ তা পারেনি বলে তিনি সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে গেছেন অনেক উচ্চতায়। পরম শ্রদ্ধেয় আমাদের জাতীয় কবি নজরুল যেন এমন এক চরিত্রের কথাই বলেছিলেন। তার সেই আকুতিতে “অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ কান্ডরী। আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পণ।’’

কিন্তু কান্ডারী জিয়া কি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই নিঃশেষ হয়ে গেলেন? না! তারপর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ঘটনার আবর্তে আবার এলেন তিনি। পচাত্তরের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রের একক দিশারী রূপে রাষ্ট্র রাজনীতির মধ্য মঞ্চে আবির্ভূত হলেন এবং এসে তিনি শুরু করেন এক আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণ কাজ। একই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে নিজের ব্যক্তিচিন্তা ও কর্মের প্রভাব সঞ্চারে তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।

বর্জনবাদী, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মানসিকতাসম্পন্ন স্বৈরতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তার ছিল না। বরং তার রাজনৈতিক কর্ম বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রহণবাদী, একমোডেটিভ মানসিকতা ছিল তার। এর ফলে অতি বাম, অতি ডান গোষ্ঠীর সকলে তার দলে এসে ঠাঁই পেয়েছে এবং নতুন চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তার সেই কাজের প্রভাব আজো সমাজে দৃশ্যমান। তার জীবনকালে যারা অনেকে বিরুদ্ধবাদী ছিল, পরে তারা বিএনপিতে এসেছে এবং শহীদ জিয়াকে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে। বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মী বুদ্ধিজীবীর ক্ষেত্রে একথা সত্য। এখানেই শহীদ জিয়ার প্রভাবের চিত্রটা উপলব্ধি করা যায়।

স্বাগতঃ বঙ্গে মুক্তিকাম। সুপ্তবঙ্গে জাগুক আবার লুপ্ত স্বাধীন সপ্তগ্রাম- এই আহবান জানিয়ে কবি নজরুল বলেছিলেন, তোমরা বন্ধু, কেহ অগ্রজ, অনুজ সোদর সম। প্রার্থনা করি ভাঙ্গিয়া দিও না মিলনের সেতু মম। এই সেতু আমি বাঁধিব, আমার সারাজীবনের সাধ। বন্ধুরা এস, ভেঙ্গে দিব যত বিদেশীর বাধা বাঁধ (বন্ধুরা ফিরে এসো)। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক অমর দেশনায়ক শহীদ জিয়ার স্মৃতির প্রতি অনন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেষ করছি।

লেখক: জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়