মতিনুজ্জামান মিটু : ড্রেজিং করে গভীরতা এবং প্রবাহ বাড়াতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাসহ দেশের ২৪টি নদ- নদী খননে লাগবে নয় লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় দ্বিগুন। দেশের বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর ওপর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রাথমিক সমিক্ষায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি অফ ক্যাপিটাল ড্রেজিং এন্ড সাসটেইনেবল রিভার ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ (এফএসসিডি এন্ড এসআরএমবি) নামের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী প্রশিক্ষণ কাজসহ মূলধন এবং রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং এর জন্য দেশের ২৪ নদ-নদীতে ১৫ বছরে ওই টাকা খরচ হবে।
সমিক্ষায় প্রথম অগ্রাধিকারে গঙ্গা, ব্রক্ষপুত্র-যমুনা, পদ্মা, মেঘনা(আপার) ও মেঘনা(লোয়ার) নদীর ড্রেজিং এর কথা বলা হয়েছে। ২য় অগ্রাধিকারের আওতায় রয়েছে; তিস্তা, হুরাসাগর, সীতালক্ষা, কর্ণফুলি ও এম বেল রোউটি নদী। তৃতীয় অগ্রাধিকারের আত্রাই, গাগোট, দুধ কুমার, ধর্লা, টঙ্গি খাল, পুরাতন ব্রক্ষপুত্র, জুরি, ধানু, ধলাই, ভোগাই-ক্যাংসু, মনু, ডাকাতিয়া ও তিস্তা(লোয়ার)। এর মধ্যে প্রথম অগ্রাধিকারের গঙ্গা নদীর জন্যে লাগবে তিন লাখ চার হাজার ৯০২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, ব্রক্ষপুত্র-যমুনা নদীর জন্য দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, পদ্মায় লাগবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬৭৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। মেঘনা (আপার) এ ৫৭৪ কোটি এক লাখ টাকা ও এক লাখ পাঁচ হাজার ৯৭১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
প্রথম অগ্রাধিকারের পাঁচ নদীতে নয় লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, দ্বিতীয় অগ্রাধিকারের পাঁচ নদীর জন্য ১৮ হাজার ৪৩৪ কোটি দুই লাখ টাকা এবং তৃতীয় অগ্রাধিকারের নদ নদীতে ৩০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ১৫ বছর মেয়াদি কমপ্রিহিনসিভ ইনভেস্টমেন্ট প্লানের প্রথম বছরে গঙ্গা, ব্রক্ষপুত্র-যমুনা, পদ্মা, মেঘনা আপার ও লোয়ার এ খরচ হবে চার হাজার ৭৪ কোটি ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিএমইউ ক্যাপিটাল(পাইলট) ড্রেজিং অফ রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল চৌধুরী জানান, ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গা নদীর ২০৫ কিলোমিটার, ২৩০ কিলোমিটারের ব্রক্ষপুত্র-যমুনার ২১৩ কিলোমিটার, ১২১ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা নদীর ৯০ কিলোমিটার ও ৬৫ কিলোমিটারের লোয়ার মেঘনার ৪৫ কিলোমিটার ড্রেজিং করতে হবে। দেশের বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ড্রেজিং এর জন্য লাঘবে বিভিন্ন সাইজের ২১৬টি ড্রেজার। প্রতি বছর এক দশমিক ১৫ বিলিয়ন পলি জমে দেশের নদ নদীতে। ড্রেজিং করে ব্রক্ষপুত্র- যমুনাসহ বড় বড় ও গুরুত্বপুর্ণ নদীগুলোর গভীরতা ও প্রবাহ বাড়ানো যেতে পারে। প্রাথমিক সমিক্ষার পরে এব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণার সুযোগ রয়েছে। ড্রেজিং করে ব্রক্ষপুত্র-যমুনার গভীরতা ও প্রবাহ বাড়ানো যেতে পারে।
এতে নদীর প্রশস্ততা কমানোর কথা বলা হয়েছে। গড়ে ১১ কিলোমিটার থেকে ১২ কিলোমিটার চওড়া ব্রক্ষপুত্র-যমুনা নদীর মাঝখানে বহু স্থানে চর পড়েছে। বর্ষায় প্রশস্ততা বেড়ে নদীটি দু’পাড়ের মানুষের দূর্দশার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এই নদী ড্রেজিং করা সম্ভব হলে প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার হবে। এই জমিতে ব্যাপকভাবে কৃষি ও শিল্পের প্রসার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় যমুনার সিরাজগঞ্জের হার্ড পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু বহুমুখি সেতুর ডান গাইড বাঁধকে ভাঙ্গন ও ক্ষতির ঝুুঁকি থেকে রক্ষা করাসহ নানা রকমের সুফল পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :