শাকিল আহমেদ: দীর্ঘ ৫৭ বছর পর ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানী হাজারিবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থান্তর করা হয়েছে। এতে হাজারিবাগের খালি জমি দখল হওয়ার আশঙ্কা করছে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক)। তাই সেখানে বহুতল আবাসিক ভবন ও লেদার গুডসের কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে রাজউক কতৃপক্ষ। তবে এতে ভালো ফলাফল দেখছেন না নগর বিশেষজ্ঞরা।
১৯৪০ সালের শেষদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে চামড়া শিল্পের যাত্রা শুরু। পরে শুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং আরো এগিয়ে নিতে ১৯৬০ সালে তা ঢাকার হাজারীবাগে স্থানান্তর করা হয়। হাজারীবাগের ২৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে ছোট-বড় প্রায় ২৫০ থেকে ২৬০ টি ট্যানারি কারখানা গড়ে উঠেছিলো। এতে ঐ এলাকার পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
এরপর ২০০১ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে ২০০৩ সালে সাভারের হরিণধরা এলাকায় ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমির ওপর পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্প নগরী নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ধিরে ধিরে কারখানা গুলো সাভারে স্থান্তর করার ফলে হাজারিবাগের জায়গাটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। জায়গাটি অবৈধ দখলের আশঙ্কা বাড়ায় সেখানে আবাসিক ভবন এবং ফিনিশড ও লেদার গুডসের কারখানা তৈরি করার কথা ভাবছে রাজউক।
এবিষয়ে রাজউকের পরিকল্পনা বিভাগের (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, হাজারিবাগের জায়গাটি উন্মুক্ত থাকায় সেখানে দখলের সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকায় কোন জমি বেশিদিন পড়ে থাকলে তা দখল হয়ে যায়। তাই সেখানে বেসরকারি বিমান কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়ে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মান করা হবে। ইতোমধ্যে জমির মালিক ও বিভিন্ন হাউজিং কম্পানির সাথে আমাদের কথাবর্তা চলছে।
এছাড়া এখানে ফিনিশড ও লেদার গুডস এর কারখানা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে জুতার উপরিভাগ, ব্যাগ, স্যুটকেস, বেল্ট, মানিব্যাগ, জ্যাকেট প্রভৃতি উৎপাদন করা হবে। এতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। জায়গাটিও দখলমুক্ত থাকবে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল¬্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, হাজারিবাগ একটি ঘনবসতি এলাকা এখানে হাউজিং করা হলে এই এলাকার মানুষের দম ফেলার জায়গা থাকবে না। তা ছাড়া আমাদের যতেষ্ট হাউজিং রয়েছে। হাউজিং সমস্যা থাকলে পূর্বাচলের মত দুরে কোথাও করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এবিষয়ে রাজউকের টাউন প্ল্যানার্সদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। তারা অনেকেই বিষয়টির পক্ষে নয়। জায়গাটি দখলমুক্ত করতে হলে কেন হাউজিং করতে হবে? এখানে লেদার গুডস এর কারখানা হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না তা নয়,হয়ত কম ক্ষতি হবে। কিন্তু এখানে পার্ক ও খেলাধুলার মাঠ করেও তো রক্ষা করা যেতে পারে। এতে জায়গাও রক্ষা হবে এবং পরিবেশেও রক্ষা পাবে।
জানতে চাইলে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখনো বলার মত কিছু হয়নি কিছুদিন পড় বিস্তারিত বলতে পারবো।
বাংলাদেশ ট্যানারি এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, এখানে আবাসিক ভবন ও লেদার গুডসের কারখানা গড়া হলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। আমরা কোন সমস্যা দেখছি না। এখানে সবার ব্যক্তি মালিকানায় ৭০ একর জমি রয়েছে সরকার যদি আমাদের এখানে রেসিডেসিয়াল করে একটি আলাদা টাউনও করে দেয় তা হলেও আমাদের কোন আপত্তি নাই ।