শিরোনাম
◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী

প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:১১ সকাল
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষায় নতুন পদ্ধতি!

ডেস্ক রিপোর্ট : পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপরও কোনো কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। তাই পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করে তা পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থাকেন। আর এত সংখ্যক মানুষের সম্পৃক্ততায় প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সবার মতামত নিয়ে পরীক্ষার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। নতুন এমন কোনো পদ্ধতিতে যেতে হবে, যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ থাকবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা টার্গেট করে পরিকল্পনা নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। অনেক দিন থেকেই প্রযুক্তির সহায়তায় পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা থাকলেও সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় প্রশ্ন না ছাপিয়ে সকাল ১০টায় সব কেন্দ্রের স্ক্রিনে একযাগে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্র সংখ্যা, কেন্দ্রে যে পরিস্থিতি, এখনো তা করার পর্যায়ে যেতে পারেনি সরকার। তবে প্রযুক্তিবিদরা প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে রিমোট আনলক স্মার্টবক্স নামের একটি প্রযুক্তির কথা বলছেন। ছাপা থেকে ?শুরু করে পরীক্ষা শুরু পর্যন্ত এই প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রশ্নপত্রের ওপর সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব। এ জন্য প্রশ্নপত্র প্যাক করা হবে একটি স্মার্টবক্সে। যা আনলক করার ক্ষমতাও থাকবে নিয়ন্ত্রিত। রিমোট আনলক স্মার্ট বক্স নামের এই বক্সগুলো খুলতে ব্যবহার করা হবে বিশেষ পিন নম্বর। যা কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা কিংবা তার কম সময় আগে। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া থাকবে বিশেষ অ্যালার্ম সিস্টেম। মাঝপথে কেউ প্রশ্নপত্রের বাক্স খুলতে চেষ্টা করলে সিগন্যাল যাবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে।
পরীক্ষা পদ্ধতিতে এ ধরনের বেশকিছু প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে শিক্ষা প্রশাসনে। দেশের প্রতিথযশা শিক্ষাবিদ ও প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়ে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে একটি জুতসই কর্মপন্থা ঠিক করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন কাজ করছেন। এ নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন বলে সাংবাদিকদের শিক্ষাসচিব সোহরাব জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শে পরীক্ষার নতুন কোনো পথ উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়, তাহলে পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব। পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট। দু-চারজন জঘন্য অপকর্মে প্রত্যেকের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘ সময় ধরে গুটি কয়েক কর্মকর্তা শিক্ষা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছেন। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর, অধিদফতরে ব্যাপক রদবদলের ইঙ্গিত দেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চলমান প্রশ্নফাঁসের সঙ্গেও এই সিন্ডিকেটের কেউ কেউ জড়িত বলে তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা করা হচ্ছে।

এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির মতামত গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে।
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ বা ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ রাখা প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের সমাধান নয় বলে মনে করেন জনপ্রিয় লেখক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, কীভাবে, কারা প্রশ্নফাঁস করছে তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে প্রশ্নফাঁস রোধ কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সারা দেশে প্রশ্নফাঁস সামাল দেয়া খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে নৈতিকতার গুণ থাকতে হবে। তাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। কিছু শিক্ষকের জন্য সবার বদনাম হচ্ছে। শিক্ষক নেতাদের প্রশ্নফাঁস বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস বন্ধে সরকারের আরো কঠিন পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীর হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিতে অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন নির্বাচিত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা, যাদের বলা হয় ‘সেটার’। কোনো যোগাযোগ ছাড়া তারা সাত দিন বোর্ডে থেকে প্রশ্ন মডারেটরের হাতে দেন। মডারেটররা প্রশ্ন মডারেট করে সিলগালা করে দিয়ে যান। সেই প্রশ্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সভায় লটারি করা হয়। যেমন- ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ এবং ‘ঘ’। এসব প্রশ্ন সেট থেকে বিজি প্রেসের ক্ষমতা আছে দুই সেট প্রশ্ন ছাপানোর। শুধুমাত্র খামের ওপর লটারি করে নির্ধারণ করা হয় কোন দুই সেট ছাপানো হবে। এ পর্যায় পর্যন্ত বোর্ডের চেয়ারম্যানেরও প্রশ্ন দেখার সুযোগ নেই। পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগের অংশগ্রহণ আছে। উপজেলা পর্যায়েও যত ক্যাডার অফিসার এবং অন্য অফিসার আছে তাদের সবার অংশগ্রহণ থাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আগে ২২৮ জন লোক বিজি প্রেসে প্রশ্ন দেখতে পেতেন। এটা কমিয়ে ১৮ জনে এসেছে। যারা যুক্ত তাদের নাম ঠিকানা বিভিন্ন বাহিনীর কাছে থাকে। সেখান থেকে প্রশ্নফাঁস কঠিন হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
গত কয়েক বছর ধরেই পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে ৪ ফেব্রুয়ারি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। প্রশ্নফাঁসে ব্যবহৃত ৩০০ মোবাইল ফোন নম্বর চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এসব মোবাইল নম্বরের মালিকদের গ্রেফতার পুলিশ অভিযানেও নেমেছে বলে জানিয়েছে ওই কমিটি। সূত্র : মানব কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়