দীপক চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর জনগণের আস্থা বাড়ছেই কেনÑ এর উত্তর সংক্ষেপে দেওয়া কঠিন। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, মারামারি-কাটাকাটি চায় না, আগুনে পুড়ে মরতে চায় না, প্রতিহত-অবরোধের নামে ধ্বংস পছন্দ করে না, ঘৃণা করে। সবাই চায়, নিরাপদে ও সুন্দরভাবে মসজিদে আল্লাহর প্রতি মুনাজাত জানাতে। মসজিদে অতীতে হত্যাকা-ও ঘটেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নির্ভিগ্নে মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে চায়; কারো আস্ফালন নয়। খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা গির্জায়-বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা করতে চায়, কারো আস্ফালন দেখতে চায় না। অর্থাৎ ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করে শেখ হাসিনার সরকারকে বিশে^র চোখে ‘ছোট’ করার চিন্তা ছিল। এক্ষত্রে কুচক্রীরা ব্যর্থ হয়েছে। গত নয় বছরের অভিজ্ঞতায় দৃঢ়তার সঙ্গে জনগণ বিশ^াস করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের যেমন বিকল্প কিছুই ছিল না, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে না পড়লে তেমনি দেশও স্বাধীন করা যেতো না।ইতিহাস আজ উল্টোপথে চলতো, অন্যরকম হতো। সুতরাং এখন চিন্তা করার সুযোগ এসেছে যে, আমরা কী ঝামেলামুক্ত জীবন বেছে নেব না সন্ত্রাসীদের অপকর্মকে উৎসাহিত করে তাদের সঙ্গেই থাকবো। এখন শুনছি, বহুল আলোচিত সেই পদ্মা সেতু নাকি জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কণ্ঠে এমন উক্তি উচ্চারিত হয় কিভাবে?
অতীতে আমরা কী দেখেছি? বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ও জাতীয় চার নেতাকে জেলের ভেতর হত্যার পর এদেশে ‘ঘৃণার রাজনীতি’ আর সামরিক স্বৈরশাসন শুরু হয়। একজন জীবন্ত মানুষ উধাও হয়ে যেতেন, হয় প্রাণহীন দেহ পড়ে থাকতো নদীর জলে, কচুরিপানা পূর্ণ ডুবায় অথবা তার কোনো চিহ্নই পাওয়া যেতো না। অথচ এই প্রাণপ্রিয় রাষ্ট্রেরই নাগরিক ছিলেন তারা। জনগণের টাকায় রাষ্ট্র চললেও যারা ক্ষমতায় থাকতেন তাদের শানশওকত বাড়তো। মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা বিচারে বা প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করা হতো। রাষ্ট্র চালাতেন যে ব্যক্তি সেই ব্যক্তির ইচ্ছাই চূড়ান্ত ছিল। জনগণকে নিয়ে তামাশা করে, মিথ্যা কথা বলে, চুপ করিয়ে দিয়ে, পাগল বানিয়ে, কারাগারে পাঠিয়ে দমন করা হতো। অথচ সেই কুঃশাসনের সাফল্যের প্রচারে টিভি, পত্রিকা, সড়ক-মহাসড়ক সয়লাব হত, আনন্দের বাদ্যবাজনা বাজতে থাকতো। জবাবদিহির কোনো দরকার ছিল না। যা খুশি তা–ই করলে কোনো কিছু আসতো যেতো না। জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ দেখা যেতো। প্রতিবাদ দমাতে লোভ বা অর্থকড়ি বা হত্যা ছিল পুরস্কার। এরপর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতা-নির্মমতা আমরা দেখলাম। পরবর্তী চাপ্টারে কী দেখলাম! ৬৭ জন গৃহপরিচারক বা গৃহপরিকারিকাও ছিল একজন প্রধানমন্ত্রীর। তিনি কে? খালেদা জিয়া। শিক্ষা-চিকিৎসা- মোবাইল ফোনসহ দ্রুত সম্প্রসারণকালীন সবগুলো বাণিজ্যিক খাত বিশেষ মহল ও ব্যক্তির দখলে এসে গেলো। নির্মাণ খাত গতিশীল করার নামে নকশা বদল হতো। গ্রাম, গঞ্জ, শহর, বন্দর, খাল, বিল, কৃষিজমি সর্বত্রই নির্মাণের নামে টাকার উৎসব শুরু হলো। জেলেদের বিল-নদী যেতো ধনাঢ্যের হাতে। এ যেনো লুটপাটের এক নুতন কৌশল। ইটভাটা অসংখ্য, বৈধ যত তার চৈয়ে অবৈধের সংখ্যা ১০গুণ বেশি। সিমেন্ট কারখানার সংখ্যাও বাড়ানোর বদলে ‘ভুয়া’ প্রতিষ্ঠান বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের কৌশল বিরাজ করছিলো। প্রতিদিন গুম, খুন, ধর্ষণ, নকল, প্রশ্নফাঁস, জালিয়াতি, ভূয়া পরীক্ষা, অস্ত্র কেলেঙ্কারি, ব্যাংক দখল, ঋণখেলাপিদের দাপট, বন উজাড়, নদী দখলের সংস্কৃতি চালু হলো। এরপর চালু হয়ে গেলো ক্রসফায়ার নামের বিচারবহির্ভূত খুন, নতুনবাহিনী গঠন করা হলো। পত্রিকায় ‘‘বড় বড়’’ শিরোনাম এলেও বিচারবহির্ভূত খুন আর বন্ধ হলো না। রাজনীতির নামে লুটপাট, ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়লো, নৈরাজ্য আর কাকে বলে? গ্রেনেড হামলা, এমপি-মন্ত্রী খুন চলতেই থাকলো। শনৈঃ শনৈঃ আয়-ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছিল কিছু ব্যক্তির। কোনোরকম যোগ্যতা না থাকলেও টেলিভিশনের চ্যানেল মালিক হয়ে গেলেন কেউ কেউ। বিপদ বাড়তেই থাকলো, সারাদেশ ছাড়িয়ে বিশে^ও আলোচনা শুরু হলো শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যেই গ্রেনেড হামলা ঢাকায়। মারাত্মক অস্থিরতা শুরু হলেও সেই সব চাপা পড়ে যায়। সবশেষে এলো ‘ওয়ান ইলেভেন’। এরপরের ইতিহাস তো সবার জানা। সুতরাং সমাজের মগজে, চিন্তায়, চেতনায় আগামী নির্বাচন নিয়েই ভাবতে হবে। কারণ, এদেশটি জনগণের।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ