শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৭:১৩ সকাল
আপডেট : ১৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৭:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস

ডেস্ক রিপোর্ট : ‘মুখোশ মানুষ-দ্যা ফেক’ সিনেমাটির জন্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পরিচালক ইয়াসির আরাফাত জুয়েল। দর্শকদের অভিযোগ, সিনেমাটিতে নগ্নতার ছড়াছড়ি। সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সমাজকে সচেতন করার কথা বলা হলেও পরোক্ষভাবে সিনেমাটি ধর্ষণকেই উৎসাহিত করেছে। তবে এবার সিনেমার কারণে নয়, এই পরিচালক বিতর্কে জড়িয়েছেন ব্যক্তিগত কারণে। বিয়ের কথা বলে টানা প্রায় দুই বছর ধরে একটি মেয়েকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেছেন তিনি। এ অভিযোগে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মামলা করেছেন নির্যাতিত নারী।

মামলাটির তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। গত ১লা জুন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলাটি করা হয়। আদালত মামলাটি কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করলে থানার এসআই মো. এনামুল হক তদন্ত করেন। তিনি গত ১৫ই জুন আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ ব্যাপারে এসআই এনামুল হক বলেন, তিনি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। সে অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এখন আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পরবর্তীতে জুয়েলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ১১ই জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা যায়, মিডিয়া অঙ্গনে কাজ করার সুবাদে ইয়াসির আরাফাত জুয়েলের সঙ্গে পরিচয় হয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এক গুণী নারী সাংস্কৃতিক কর্মীর। পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন জুয়েল। মেয়েটির দাবি, এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি জুয়েল। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেয়েটি বলেন, জুয়েল তাকে নানাভাবে বোঝাতে থাকেন। কোনো কিছুতেই কাজ না হওয়ায় এক পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১২ই মার্চ ৮ থেকে ৯ জন সহযোগী নিয়ে তুলে নিয়ে যায়। তারা তাকে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর চেম্বারে নিয়ে যায়। জুয়েলকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তিনি জুয়েলকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।

বলেন, ভিন্ন ধর্মের কারণে উভয়ের পরিবার এ বিয়ে মেনে নেবে না। তবে তার এসব কথায় ওই সময় কেউই কর্ণপাত করেননি। একপর্যায়ে ওই আইনজীবীর কাছেও কান্নাকাটি করেন মেয়েটি। তিনিও সায় দেননি তাতে। মেয়েটি জানান, তাদের কারো সহযোগিতা না পেয়ে একপর্যায়ে ভয় পেয়ে যাই। তাদের কথাবার্তায় ধর্ষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কাও করি। পরে ওইদিনই তাকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয় কাজীপাড়ার একটি বাসায়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। কক্ষের আশেপাশে অনেকেই তখন অবস্থান করছিলেন। তিনি ভয়ে ওই রাতে এক মুহূর্তের জন্যও ঘুমাতে পারেননি। ভয়াবহ এই রাত শেষ হলে পরদিন ১৩ই মার্চ (২০১৩ সাল) জুয়েল ও ওই আইনজীবী তাকে কোর্টে নিয়ে যান। সেখানে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। একপর্যায়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। উপস্থিত মাসুদ নামে একজন তার ভাই হিসেবে স্বাক্ষর করেন। জুয়েল ও তার বিয়ে হয়েছে বলে তারা জানিয়ে দেয়। মেয়েটি বলেন, তিনি অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়ায়, মুসলিম নিয়ম-কানুন জানতেন না। তাদের কথায় বিশ্বাস করেন। ভবিষ্যতে জুয়েল কোনো সমস্যা করলে বিষয়টা দেখবেন বলেও আশ্বস্ত করে সেখানে উপস্থিত জুয়েলের সহযোগীরা। তারা তাকে একটি এফিডেভিটের কাগজ ধরিয়ে দেয়।

বলে, এটাই বিয়ের কাগজপত্র। তারা এও বলে, আরো ১৫ হাজার টাকা লাগবে ওয়ারিশের জন্য পেপার করতে। কিন্তু ওই মুহূর্তে টাকা নেই বলে জুয়েল তা পরে করে দেয়ার কথা বলেন। এরপর থেকে তারা একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। একপর্যায়ে জুয়েলের মা ও বোনও তাদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। প্রাচ্যনাটের এই কর্মী জানান, বিয়ের পরপরই ইয়াসির আরাফাত জুয়েলের আসল চরিত্র উন্মোচন হতে থাকে। বলেন, জুয়েল ইয়াবা আসক্ত। তাকে নানাভাবে যৌন নির্যাতন করতে থাকে। নেশাগ্রস্ত হয়ে মারধর করেন। এর মধ্যে দু’বার সন্তান সম্ভবা হই। সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হলে জোর করে ওষুধ খাওয়ায়। এমনকি সন্তান নষ্ট করার জন্য তলপেটে লাথি মারে। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর ২০১৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর ওই বাসা থেকে মা ও বোনকে নিয়ে বের হয়ে যায় জুয়েল। এরপর সে বিভিন্নভাবে আমার নামে কুৎসা রটাতে থাকে। একপর্যায়ে বিয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করে ইয়াসির আরাফাত জুয়েল। পরে গত বছরের ১লা জুন তিনি আদালতে নারী ও শিশু দমন আইনে একটি ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় জুয়েল ছাড়াও সহযোগী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ ওই আইনজীবীর সহযোগিতায় ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ের হলফনামা করা হয়। এরপর থেকে তারা একসঙ্গে সংসার করে আসছিলেন। বিয়ের হলফনামাটি যে বিয়ের কাবিননামা নয়, বাদী তা বুঝতে পারেননি। বিয়ের পর বাদীর উপার্জনের সব অর্থ জুয়েল ছিনিয়ে নিতো। সেই অর্থ দিয়ে নানারকমের অবৈধ কাজকর্ম করতো। প্রায়ই গভীর রাতে বাসায় ফিরে মারধর করতো। এরই একপর্যায়ে জুয়েল ও তার বোন-মা তাকে ফেলে চলে যায়। এরপরও মেয়েটি আশায় ছিলেন যে, সে ফিরে আসবে। গত ২৯শে মে দুপুর ২টায় বাদী (নির্যাতিত নারী) ফোন করে জুয়েলকে অনুরোধ করেন, বিয়ে রেজিস্ট্রি করে শান্তিপূর্ণভাবে ঘর-সংসার করার। এদিকে আদালতে মামলাটি হওয়ার পর তদন্ত করেন কলাবাগান থানার এসআই মো. এনামুল হক। তিনি গত ১৫ই জুন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার প্রধান আসামি জুয়েল ও ওই আইনজীবী একে অপরের দীর্ঘদিনের পরিচিত। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনজীবীর সহযোগিতায় বাদী এবং জুয়েল একটি এফিডেভিট করেন। কিন্তু বাদী বা বিবাদী ইয়াসির আরাফাত জুয়েল কেউ কোনো প্রকার কাবিন বা কোনো ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করেনি। ইয়াসির আরাফাত জুয়েল প্রায় দুই বছর ধরে বাদীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন এসআই এনামুল হক। প্রাথমিক তদন্তে বাদীর অভিযোগ সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়।

এসআই এনামুল বলেন, জুয়েল মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বিয়ে হয়েছে বলে তার সঙ্গে সংসার করেছে। বিভিন্ন সময় নির্যাতনও করেছে। তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মামলার বাদী নির্যাতিত মেয়েটি বলেন- আমার ধর্ম ভিন্ন। তাই আমি তার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। বিয়েও করতে চাইনি। কিন্তু তারা আমাকে জিম্মি করে জোরপূর্বক বিয়ে করেছে। এ ঘটনার পর আমার আর নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ ছিল না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। তাই মন থেকে জুয়েলকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাকে নির্যাতন করে। নেশা করে যৌন নির্যাতন চালায়। এখন সে বিয়ের কথা অস্বীকার করছে। সে বিভিন্ন জায়গায় এও বলে বেড়াচ্ছে যে, আমার সঙ্গে এতদিন লিভ টুগেদার করেছে।

নির্যাতিত নারী বলেন, একে তো আমি অন্য ধর্মের, নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারছি না। এসব নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এখন আমার পরিচয় ও অবস্থান কি? তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন। এদিকে গত ১১ই জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত ইয়াসির আরাফাত জুয়েলকে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। গত ১৬ই জানুয়ারি এ বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়। তার আইনজীবী জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করেন। অন্যদিকে মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এমন দাবি করলে এ ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি আসামিপক্ষ। আগামী ২২শে জানুয়ারি শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়