ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : মুমিন নারী, আল্লাহ তোমার রেহেমে যা সৃষ্টি করেন তার ব্যাপারে তুমি আমানতদার। অতএব, তুমি আমানত গোপন করো না। আল্লাহ তাআলা বলেন, এবং তাদের জন্য হালাল হবে না যে, আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন, তা তারা গোপন করবে, যদি তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]
গর্ভপাত ঘটানো বা যেভাবে হোক তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বাহানা করো না। কারণ, আল্লাহ তোমার জন্য রমযানের পানাহার বৈধ করেছেন যদি সিয়াম তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়। যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ সঞ্চার করা হয় এবং গর্ভপাত ঘটানোর ফলে মারা যায়, তাহলে এটা অন্যায় হত্যার শামিল, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। গর্ভের বাচ্চা হত্যাকারীকেক্ষতিপূরণ দিতে হয়, যদিও তার পরিমাণ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।কতক আহলে ইলম বলেন, কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব।অর্থাৎ মুমিন দাসী মুক্ত করা, যদি মুমিন দাসী পাওয়া না যায় লাগাতার দু’মাস সিয়াম রাখবে।কতক আহলে ইলম গর্ভের বাচ্চা হত্যাকে এক প্রকার জ্যান্ত দাফন গণ্য করেছেন। শাইখ মুহাম্মাদ ইবরাহীম (রা.) বলেন, গর্ভে থাকা বাচ্চা ফেলে দেওয়া হালাল নয়, যদি তার মৃত্যু নিশ্চিত না হয়, মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফেলে দিবে। [ফতোয়াসমগ্রে: ১১/১৫১]
‘বড় আলেমদের সংস্থা’র সভায় গর্ভপাত ঘটানোর ব্যাপারে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:
১. শরঈ দু একটি কারণ ব্যতীত গর্ভের কোনো পর্যায়ে বাচ্চা ফেলা বৈধ নয়।
২. গর্ভ যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে, যার বয়স চল্লিশ দিন, আর গর্ভপাত করার কারণ যদি হয় সন্তান লালন-পালন করার কষ্ট অথবা তাদের ভরণ-পোষণ করার দুশ্চিন্তা অথবা ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা অথবা যে সন্তান আছে তাদেরকে যথেষ্ট জ্ঞান করা, তাহলে বৈধ নয়।
৩. জমাট বাঁধা রক্ত অথবা গোশতের টুকরা থাকা অবস্থায় গর্ভপাত ঘটানো বৈধ নয়,হ্যাঁ যদি নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি টিম বলে যে, গর্ভ থাকলে মায়ের জীবনের আশঙ্কা আছে তাহলে বৈধ, তবে এটা অবশ্যই গর্ভধারী মাকে শঙ্কামুক্ত করার সকল প্রচেষ্টা প্রয়োগ শেষে হতে হবে।
৪. গর্ভ যদি তৃতীয় স্তর পার করে ও তার চার মাস পূর্ণহয়, তাহলে গর্ভপাত করা বৈধ নয়, তবে একদল বিশেষজ্ঞ নির্ভরযোগ্য ডাক্তার যদি বলে যে, পেটে বাচ্চা থাকলে মায়ের মৃত্যুর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে তাহলে বৈধ। আরঅবশ্যইএটা হতে হবে বাচ্চার জীবন রক্ষা করার সকল প্রচেষ্টা ব্যয় শেষে। এ সুযোগ প্রদান করা হয়েছে দু’টি ক্ষতি থেকে ছোট ক্ষতি দূর করা ও দু’টি কল্যাণ থেকে বড় কল্যাণ অর্জন করার স্বার্থে।
আলেমগণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেষে আল্লাহর তাকওয়া ও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ একমাত্র তাওফিক দাতা। আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তার পরিবার ও সাথীদের ওপর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন। নারীদের স্বাভাবিক ঋতু সংক্রান্ত পুস্তিকায়, (পৃ.৬০) শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীন (রা.) বলেন, যদি গর্ভের বাচ্চায় রূহ আসার পর গর্ভপাত করে সন্তান নষ্ট করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে হারাম। কারণ এটা অন্যায়ভাবে প্রাণ হত্যার শামিল, নির্দোষ প্রাণকে হত্যা করা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ঐকমত্যে হারাম। ইবনুল জাওযী (রা.) আহকামুন নিসা (পৃ.১০৮ ও ১০৯) গ্রন্থে বলেন, বিবাহের উদ্দেশ্য যখন সন্তান হাসিল করা, আর এটাও সত্য যে সকল বীর্যথেকে সন্তান হয় না,অতএব স্ত্রীর পেটে সন্তান আসলেবিবাহের উদ্দেশ্য হাসিল হলো, তারপর গর্ভপাত ঘটানো বিবাহের হিকমত পরিপন্থী। গর্ভপাত যদি গর্ভের বাচ্চায়রূহ সঞ্চার করার পূর্বে হয় বড় পাপ, আর যদি রূহ সঞ্চার করার পর গর্ভপাত করা হয় সেটা হবে মুমিন নফসকে হত্যা করার মতো। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যখন জ্যান্ত দাফনকৃত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে। [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ৮-৯] অতএব, হে মুসলিম নারী আল্লাহকে ভয় কর, যে কোনো উদ্দেশ্যই হোক এ জাতীয় অপরাধে অগ্রসর হয়ো না। পথভ্রষ্টদের প্রচারণা ও পাপাচারীদের অনুসরণ করে ধোঁকায় পতিত হয়ো না, তাদের কর্মের সাথে বিবেক ও দীনের কোনো সম্পর্ক নেই।